বঙ্গবন্ধু টানেল: দক্ষিণ টিউবের কার্যসমাপ্তি অনুষ্ঠানে আজ যোগ দিবেন প্রধানমন্ত্রী
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ শেষে হয়েছে গত সপ্তাহে। উত্তর টিউবের পূর্ত কাজ শেষ হবে ডিসেম্বরে। এ নিয়ে টানেলের কাজের মোট অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ।
বিশেষায়িত প্রকল্পটির একটি টিউবের জটিল বোরিং ও পূর্তকাজের সমাপ্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে শনিবার (২৬ নভেম্বর) এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আজ ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্প পরিচালক হারুনর রশিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "টানেল বোরিং ছাড়াও দুটি টানেলের মধ্যে ক্রস প্যাসেজ নির্মাণের কাজ সবচেয়ে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। আমরা সফলতার সঙ্গে সেই কাজ শেষ করেছি।"
১৫ নভেম্বর পর্যন্ত টানেলের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৪ শতাংশ। তবে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এর মধ্যে টানেলের উত্তর টিউবের ২ হাজার ৪৪৬ মিটার ও দক্ষিণ টিউবের ২ হাজার ৪৫৮ মিটার বোরিং কাজ, টিউবের লেন স্লেভ, তিনটি ক্রস প্যাসেজের (সংযোগ পথ) কাজ, ভায়াডাক্ট, উভয় টিউবের পেভমেন্ট স্লেভ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
হারুনর রশিদ বলেন, "দক্ষিণ টানেলের পূর্ত কাজ শেষ হলেও ইলেকট্রোমেকানিকাল কাজ বাকি। পূর্ব অংশ ও পশ্চিম অংশে চলমান আছে পিসি এনডোরেন্স শিট ইনস্টলমেন্ট কাজ। টানেলের দুই প্রান্তেই ২ মেগাওয়াটের সাময়িক বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। টানেলে চালুর জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫ মেগাওয়াটের সাব-স্টেশন।"
তিনি আরো জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে টানেলের বাকি পূর্তকাজও শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে টানেলটি কখন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে সেই সম্পর্কে বলতে রাজি হননি প্রকল্প পরিচালক। যদিও প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে টানেলের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, নভেম্বরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেলের অন্তত একটি টিউব যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার চেষ্টা ছিলো সরকারের।
"তবে এখন পর্যন্ত টানেলের কেবল কানেকশন, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, লাইটিংসহ ইলেকট্রোমেকানিকাল ওয়্যারিংয়ের অনেক কাজ চলমান," জানান তিনি।
এছাড়া সংযোগ সড়ক ও ইন্টারসেকশনসহ আনুষাঙ্গিক কাজগুলো শেষ না হওয়ায় টানেল উদ্বোধনের দিন পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য চলতি মাসের প্রথম দিকে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।
এরইমধ্যে এটি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিতে পাস হয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে একনেকে উঠবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী স্বাধীনতা দিবসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বহুল প্রত্যাশার বঙ্গবন্ধু টানেল।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, "সড়ক কিংবা সেতুর চেয়ে একটি টানেল সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর স্থাপনা। তাই গড়ি চলাচল শুরুর আগে, মূল টানেলের নির্মাণকাজ শেষ করার পাশাপাশি প্রকল্পের বাহ্যিক কাজ ও সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। টানেল থেকে বেশি সুফল পেতে হলে নতুন রাস্তা তৈরি করতে হবে।"
প্রকল্প পরিচালক হারুনর রশিদ বলেন, "পূর্ত কাজ সম্পন্ন হলেও টানেল হয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে আরও পরে। টানেলের দক্ষিণ টিউব দিয়ে আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রাম শহরে এবং উত্তর টিউব দিয়ে চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমির দিক থেকে আনোয়ারার দিকে যান চলাচল করবে।"
"গতিশীল ইন্টারসেকশন নির্মাণের জন্য গঠিত কমিটি একাধিক ডিজাইন প্রস্তুত করেছে। সরকারের অনুমোদন পাওয়ার পর এসবের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে," জানান তিনি।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের কাজ উদ্বোধন করেন।
২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। পরবর্তী সময়ে একই বছর প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা করা হয়। ওই সময়ে মেয়াদ ২০২০ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০২২ সাল করা হয়।
সর্বশেষ দ্বিতীয় সংশোধনীতে বঙ্গবন্ধু টানেলের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।
চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই টানেল। এ প্রকল্পে ২ শতাংশ হার সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
কর্ণফুলীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে 'ওয়ান সিটি টু টাউন' গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার।
দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার।