কক্সবাজারে পৌঁছে গেল প্রথম ট্রেন
ঝিনুকের আদলে তৈরি এশিয়ার সর্ববৃহৎ আইকনিক রেল স্টেশন কক্সবাজারে পৌঁছে গেল প্রথম ট্রেন। রোববার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে আলোর বন্যা বইয়ে, হুইসেল বাজিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করে ট্রেনটি। এর আগে এদিন সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল এটি।
কক্সবাজারে 'স্বপ্নের এই রেললাইন' উদ্বোধন হচ্ছে ১১ নভেম্বর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। মূলত উদ্বোধনের আগে প্রকল্পটি রেল চলাচলের উপযোগী কি না তা দেখতে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনটির যাত্রা। বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ ট্রেন পৌঁছার দৃশ্য দেখতে রোববার বিকেল থেকে স্টেশনে জড়ো হতে থাকেন বিপুল সংখ্যক মানুষ।
সকাল চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে আটটি বগি নিয়ে সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) রুহুল কাদের আজাদের নেতৃত্বে বিশেষ ট্রেনটি ১৪৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ যাত্রা শুরু করে। চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে সংস্কার করা শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু পার হয়ে দোহাজারী স্টেশনে পৌঁছে এটি। এখান থেকেই মূলত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে।
জিআইবিআর-এর এ পরিদর্শন দলের সঙ্গে আরও ছিলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. নাজমুল ইসলাম, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা, অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কালাম চৌধুরীসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে কক্সবাজারের রামু পর্যন্ত ট্রেনে গিয়ে দেখা যায়, নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচল করছে। কালুরঘাট সেতু অতিক্রমের সময় ট্রেনের গতি কমিয়ে ফেলা হয়। দোহাজারী স্টেশন থেকেই কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েলগেজ নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। এ স্টেশনটির নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি।
ট্রেন যাওয়ার সময় পথে হাজার হাজার স্থানীয়রা ট্রেনকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। আটটি বগির ট্রেনটি চালান লোকোমাস্টার মো. মাহফুজুর রহমান ও সহকারী লোকোমাস্টার রুখন মিয়া। এছাড়াও ট্রেনে একাধিক গার্ড, রেলওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা (আরএনবি) দায়িত্ব পালন করেছেন।
কক্সবাজারে প্রথম ট্রেন নিয়ে যাওয়া এক ঐতিহাসিক মুহূর্তই বটে। অনুভূতি জানতে চাইলে লোকোমাস্টার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'খুব ভালো লাগছে পর্যটননগরী কক্সবাজারে যাওয়া ট্রেনটি আমি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তবে এ অভিজ্ঞতা আমার নতুন নয়। সম্প্রতি আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের প্রথম ট্রেনটিও আমি চালিয়েছি। সত্যিই ভাল লাগছে।'
প্রত্যেক স্টেশনে জিআইবিআর প্রধান-এর পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যা ৬টার কিছু পরে ট্রেনটি কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছায়। নবনির্মিত রেলপথ, ব্রিজ ও স্টেশনগুলো জিআইবিআর প্রধান পরিদর্শনের কারণে এ দীর্ঘ সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন ট্রেনে থাকা আরেক লোকোমাস্টার সাজু কুমার দাশ। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মতো। নতুন রেলপথ বলে ঘণ্টায় ৪০–৪৫ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চালানো হয়েছে। সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে ট্রেন চালানো হবে। তখন ট্রেন নির্ধারিত সময়েই পৌঁছাবে।
এদিকে পরীক্ষামূলক ট্রেন যাত্রা ও পরিদর্শন শুরুর আগে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে জিআইবিআর প্রধান রুহুল কাদের আজাদ বলেন, 'আমরা নবনির্মিত রেললাইনের ট্র্যাক, স্টেশন ভবন, সিগন্যালিং, ব্রিজ, কালভার্ট, আন্ডারপাস সরেজমিনে পরিদর্শন করব। আমাদের সঙ্গে সিগন্যালিং, ইলেকট্রিক্যাল, রেল ট্র্যাকসহ সমস্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা আছেন।'
এর আগে শনিবার (৪ নভেম্বর) ৯২ বছরের পুরনো কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের জন্য একাধিকবার ট্রায়াল রান করে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ। এদিন ২২০০ সিরিজ (ওজন ৫০–৫৫ টন), ২৯০০ সিরিজ (ওজন ৭০–৭৫ টন), ও ৩০০০ সিরিজের (ওজন ৮৫–৯০টন) ইঞ্জিন দিয়ে এ ট্রায়াল রান করা হয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা বলেন, 'কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে এখন ট্রেন চলাচলে আর কোন বাধা নাই। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে নতুন জেলা হিসেবে যুক্ত হবে কক্সবাজার।'
প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, 'প্রকল্পের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। প্রকল্পের অধীনে ১০২ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক বসানো হয়েছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ৩৯টি ব্রিজ ও আন্ডারপাসসহ ২৫১টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনসহ নয়টি স্টেশনের নির্মাণকাজ একদম শেষ পর্যায়ে। এছাড়াও আন্ডারপাসের ওপর দিয়ে হাতি চলাচলের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।'