হরতাল-অবরোধ: ৪ অবকাঠামোতে কমেছে যানবাহন চলাচল ও টোল আদায়
২৮ অক্টোবর বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ ও এরপর থেকে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির ৯ দিনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলাচল ও টোল আদায় প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।
এ সময়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে পদ্মা বহুমুখী সেতু, যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতু আর মোক্তারপুর সেতুর হিসাব যোগ করলে যানবাহনের সংখ্যা ও টোল আদায় কমেছে ৩৫ শতাংশের বেশি। এরমধ্যে পদ্মা সেতুতে ৩৭.৭১ শতাংশ, বঙ্গবন্ধু সেতুতে ২৭.৮৮ শতাংশ ও মোক্তারপুর সেতুতে ১৬.৩৪ শতাংশ কমেছে যানবাহন চলাচল।
যানবাহন চলাচল কম হওয়ায় এই চার অবকাঠামো থেকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১৩.২৬ কোটি টাকা কম টোল আদায় হয়েছে বলে সেতু বিভাগের টোল আদায়ের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জানা গেছে।
সেতু বিভাগের প্রতিবেদন বলছে, সমাবেশ, হরতাল আর অবরোধের দিনগুলোতে এই চারটি অবকাঠামোতে দৈনিক গড়ে প্রায় ৫০.৮১ হাজার যানবাহন চলাচল করেছে। আগের মাসের একই দিনগুলোতে গড়ে যানবাহন চলেছে দৈনিক ৭৮.৫১ হাজার। এ হিসাবে অবরোধ হরতালের দিনগুলোতে গড়ে প্রতিদিন ২৭.৬৯ হাজার গাড়ি কম চলেছে।
এই চার অবকাঠামো থেকে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৪.২১ কোটি টাকা টোল আদায় হলেও কর্মসূচির দিনগুলোতে আদায় নেমেছে ২.৭৩ কোটি টাকায়। এ হিসাবে প্রতিদিন টোল আদায় কমেছে ১.৪৭ কোটি টাকা করে।
হরতাল অবরোধ অব্যাহত থাকলে শ্রমিক ও পণ্য পরিবহনে বিপর্যয়ের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। টোল আদায়ে বড় ধস নামলে সেতু নির্মাণে ঋণের কিস্তি পরিশোধও বাধাগ্রস্থ হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সমীর সাত্তার দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর ট্রাফিক চলাচলের প্রভাবের ওপর জোর দিয়ে বলেন, পরিবহনের ক্ষেত্রে বাধা অনিবার্যভাবে ব্যবসায়িক উৎপাদন, বাণিজ্য এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ব্যারিস্টার সাত্তারের মতে, গাড়ি চলাচল কমে গেলে কারখানায় কাঁচামালের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, তৈরি পণ্য পরিবহনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে এবং এমনকি শ্রমিকদের চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, এই বাধাগুলোর একটি দ্বি-মুখী প্রভাব রয়েছে– এরফলে একদিকে যেমন ব্যবসার খরচ বাড়ে, অন্যদিকে এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও চলমান উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করে।
বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচী সেতুর ঋণ পরিশোধে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. শামসুল হক বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে হরতাল-অবরোধে প্রয়োজনীয় যাত্রা বাতিল না করে লোকজন তা স্থগিত করেন। পণ্য পরিবহনেও একই প্রবণতা দেখা যায়।
তবে লম্বা সময়ের জন্য এ ধরনের কর্মসূচি আসলে পর্যটন ও পণ্য পরিবহন কমে আসলে, আদায় হওয়া টোলে ঋণ পরিশোধ কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, অভ্যন্তরীণ অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় ৩২ হাজার ৬০৫ দশমিক ৫২ কোটি টাকা। পুরো অর্থ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
চুক্তি অনুযায়ী, এক শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে ঋণের টাকা ফেরত দেবে কর্তৃপক্ষ। ঋণ পরিশোধের শিডিউল অনুযায়ী, প্রতি অর্থবছরে চারটি কিস্তি করে সর্বমোট ১৪০টি কিস্তিতে সুদ-আসলে ঋণ পরিশোধ করা হবে।
এদিকে, যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় ইতোমধ্যে সেতু নির্মাণের ব্যয় ছাড়িয়েছে। আর পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) ভিত্তিতে নির্মাণ করা ঢাকা এলভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিনিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ টোল আদায় করায় এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে সেতু বিভাগের কোনো দায় নেই।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রাজধানীর বিমান বন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে হরতাল-অবরোধে যানবাহন চলাচল ও টোল আদায়ের হার কমেছে সবচেয়ে বেশি।
অবরোধ ও হরতালের দিনগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ১৬,০৩৬টি যানবাহন এই অবকাঠামো ব্যবহার করেছে। আগের মাসের একই দিনগুলোতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী গাড়ির সংখ্যা ছিল গড়ে ২৯,৮৩৭টি। এ হিসাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিদিন প্রায় ১৩,৮০১ সংখ্যক গাড়ি কম চলেছে।
হরতাল-অবরোধের সময়গুলোতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৩.০৯ লাখ টাকা টোল আদায় হয়েছে, যা স্বাভাবিক সময়ের ২৪.৩২ লাখ টাকা থেকে গড়ে ৪৬ শতাংশ কম। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে প্রতিদিন ১১.২২ লাখ টাকা কম টোল আদায় হয়েছে। এ হিসাবে ৯ দিনে টোল কম এসেছে এক কোটি টাকার বেশি।