উচ্চ শুল্কে চড়া আমদানিকৃত ফলের দাম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ডলারের বাড়তি দামের কারণে বেড়েছিল আমদানিকৃত ফলের দাম। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমদানিতে উচ্চ হারে শুল্কারোপ। যাতে ফলের দাম বেড়েছে আগের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
এক কেজি আপেল ঢাকার খুচরা বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। সুপারশপে গেলে আরও ৪০-৫০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। অথচ ছয় মাস আগেও আপেলের দাম এর অর্ধেক ছিল।
শুধু আপেলই নয়, এখন উচ্চ মূল্যে কিনতে হচ্ছে আমদানি করে আনা কমলা, আঙ্গুর, মাল্টা, আনার, নাশপাতি সহ বিভিন্ন ফল।
আমদানিকারকদের দেওয়া তথ্য বলছে, এক কেজি আপেল বা কমলা আমদানিকারকরা কিনছেন মাত্র ৫০ টাকায়। কিন্তু প্রতি কেজিতে সরকারকে শুল্ক দিতে হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা পর্যন্ত। আমদানিকারক থেকে নিয়ে পাইকারী ব্যবসায়ীরা ১৭০-১৯০ টাকায় এই ফলগুলো যখন বিক্রি করছে, সেটা খুচরা পর্যায়ে গিয়ে ৩০০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে সরকার আমদানি করা এসব পণ্যের উপর ব্যাপক হারে শুল্কারোপ করার কারণেই মূলত এসব ফলের দাম বেড়েছে। সরকার ফলের আমদানি ব্যয়ের দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করছে বলে তারা জানিয়েছেন।
শীতকালে সাধারণত কমলার চাহিদা বেড়ে যায়। স্থানীয়ভাবে কমলার উৎপাদন কম থাকায় এখনো ফলটি আমদানি নির্ভর।
স্থানীয় কমলা এখনো বাজারে খুব বেশি না মিললেও ভারতীয় কমলা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যা বিভিন্ন বাজারে ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও অবশ্য ৩০০ টাকাতেও বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। গত রোজার মাসেও অবশ্য কমলা বিক্রি হয়েছে ২২০-২৩০ টাকায়।
ঢাকার খুচরা বাজারগুলোতে আমদানি করে আনা মাল্টা ২৮০-৩০০, লাল আঙ্গুর ৩৮০-৪০০ টাকা, আনার ৬৫০-৭০০ টাকা, নাশপাতি ২৫০-২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেশি হওয়ার কারণে অবশ্য এসব ফলের বিক্রি কমে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফআইএ)-এর সভাপতি মো. সেরাজুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "ডলার সংকটের কারণে একদিকে এলসি করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে অতিরিক্ত শুল্ক। সব মিলিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই জটিল হয়ে পড়েছে।"
তিনি বলেন, "যখন যেমন মনে হচ্ছে আমদানি করা ফলে শুল্ক বসিয়ে দিচ্ছে, সঙ্গে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। ফলের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে এই দুটি বিষয়ই কাজ করছে। আমরা যে দাম দিয়ে এক কেজি আপেল বা কমলা কিনছি, তার দ্বিগুণ শুল্ক দিতে হচ্ছে।"
খেজুর আমদানিতে নতুন জটিলতা
খেজুর আমদানির উপর মোট ডিউটি-ট্যাক্স ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৫৩ শতাংশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে মিনিমাম ট্যারিফ ভ্যালু।
ইরাক, দুবাই, আলজেরিয়া ও টিউনিশিয়া থেকে যেসব খেজুর (কার্টনে) আমদানি করা হতো তার মিনিমাম ট্যারিফ ভ্যালু টনপ্রতি ১০০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২০০০ ডলার এবং মিশর ও সৌদি আরব থেকে যেসব খেজুর (কার্টুনে) আমদানি করা হয় তার মিনিমাম ট্যারিফ ভ্যালু ১০০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে টনপ্রতি ৪০০০ ডলার করা হয়েছে।
এতে করে আগে যেখানে মোটামুটি মানের খেজুর ৩০০-৫০০ টাকার মধ্যে কেনা যেত, সেই মানের খেজুর কিনতে হচ্ছে ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে।
বর্ধিত শুল্কায়ন মূল্য ও ডিউটির কারণে প্রতি কেজিতে প্রায় ১৩০ টাকা ইমপোর্ট ট্যাক্স সরকারকে দিতে হচ্ছে, যা আগে ছিল সাড়ে ১০ টাকা।
প্রতি বছর দেশে ৫০-৬০ হাজার মেট্রিক টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। যার ৭০ ভাগই রমজান মাসে প্রয়োজন হয়।
মো. সিরাজুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "অতিরিক্ত দাম হলে ভোক্তা খাওয়া কমিয়ে দেবে এটাই স্বাভাবিক। ডলার সংকট, এলসি জটিলতার মধ্যে পণ্য এনে কোন ব্যবসায়ীই অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে চাইবে না।"
তিনি আরও বলেন, এসব বিষয় তুলে ধরে বিএফএফআইএ এসোসিয়েশন থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এফবিসিসিআইকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, গত ৩১ অক্টোবর এনবিআরকে চিঠি দেয়। চিঠিতে আগামী রমজান উপলক্ষে খেজুরের বর্ধিত শুল্কায়ন মূল্য ও আমদানি শুল্ক বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
যদিও এনবিআর থেকে এখনো পর্যন্ত এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোন অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে।