কাঁচামাল সংকটে যশোরের সরকারি খাওয়ার স্যালাইন কারখানায় উৎপাদন বন্ধ
তীব্র কাঁচামাল সংকটে গত ৩০ নভেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে যশোরের খাবার স্যালাইন উৎপাদন ও সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম।
কাঁচামালের সরবরাহ না থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে যশোরের সরকারি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে বিষয়টি নিশ্চিত করে যশোর খাবার স্যালাইন উৎপাদন কারখানার ব্যবস্থাপক ডা. শাহনেওয়াজ বলেন, "আমাদের কাছে এখন প্রায় ৫ লাখ ব্যাগ স্যালাইন মজুদ রয়েছে, যা দিয়ে আগামী একমাস চালানো যাবে। যদি এরমধ্যে কাঁচামাল সরবরাহ না পাই, তাহলে সংকট দেখা দিতে পারে।"
সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিনামূল্যে খাওয়ার স্যালাইন (ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট বা ওআরএস) সরবরাহ করছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। সারাদেশে প্রতিষ্ঠানটির খাওয়ার স্যালাইন উৎপাদনের পাঁচটি আঞ্চলিক ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে পুরোপরি বন্ধ রয়েছে যশোর ইউনিটের উৎপাদন। এর প্রভাবে খুলনা বিভাগসহ ফরিদপুর ও রাজবাড়ি জেলায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে খাওয়ার স্যালাইনের সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইপিএইচ) আওতায় যশোর খাবার স্যালাইন ও বিতরণ প্রতিষ্ঠান ওআরএস উৎপাদন করে আসছে। বছরে মোট ২৫-২৮ লাখ প্যাকেট ওআরএস উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। সরকারি এ স্যালাইন বিনামূল্যে পায় সাধারণ মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, জনস্বাস্থ্যের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে একটি অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরির লক্ষ্যে ওআরএস উৎপাদন প্রক্রিয়া রয়েছে। ওআরএসের চারটি উপাদান (গ্লুকোজ, সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাসিয়াম ক্লোরাইড ও ট্রাইসোডিয়াম)। তীব্র ডায়রিয়াজনিত রোগের কারণে শরীরে পানিস্বল্পতা পূরণ করতে খাওয়ার স্যালাইন মুখ্য ভূমিকা পালন করে। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম তীব্র ডায়রিয়াজনিত রোগ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডিহাইড্রেশনের কারণে এসব মৃত্যু হয়। মূলত এ চার উপাদানের অভাবে দেশে সরকারিভাবে খাওয়ার স্যালাইন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, "খুলনা বিভাগের সব জেলা এবং ফরিদপুর ও রাজবাড়ি জেলায় যশোর ইউনিট থেকে স্যালাইন সরবরাহ করা হয়। কাঁচামাল সংকটের কথা এরই মধ্যে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে জানানো হয়েছে।"
যশোর ইউনিটের দৈনিক ১৫ হাজার প্যাকেট স্যালাইন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে বলে জানান তিনি। গত বছর প্রায় ২৮ লাখ প্যাকেট সরবরাহ করে এই ইউনিট।
এদিকে, যশোর ইউনিটের ব্যবস্থাপক ডা. শাহনেওয়াজ আরও বলেন, "জানতে পেরেছি সরকার শিগগিরই বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনছে। আশা করছি, স্বাস্থ্য সেবায় এর প্রভাব পড়বেনা।"
যশোর আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাসপাতলের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুণ অর রশিদ জানান, "আমাদের হাসপাতালে এখনও খাবার স্যালাইনের মজুদ রয়েছে, যা দিয়ে আগামী ২০ দিন চলতে পারবো। তবে এরমধ্যে কারখানা উৎপাদনের যেতে না পারলে সংকট দেখা দিতে পারে।"
এদিকে, মজুদ থাকলেও উৎপাদন বন্ধ থাকাকালীন চাহিদা বেশি হয়ে গেলে ঘাটতি দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন।
তিনি বলেন, "জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের উৎপাদন বন্ধ হলেও তারা যদি সরবরাহ ঠিক রাখতে পারে, তাহলে তো ভালো।"
"তবে মজুদ থাকার পরও যদি চাহিদা বেড়ে যায়, তবে বড় ধরনের সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে," যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, "ইউনিটগুলো থেকে কাঁচামাল সংকটের কথা আমাদের জানিয়েছে। কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য গত জুলাই-আগস্টের দিকে ই-জিপি করা হয়েছে। এ কার্যক্রম এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যারা দরপত্র প্রস্তাব জমা দিয়ে ক্রয়াদেশ পান, তাদের কেউ কেউ কাঁচামাল আমদানি করে আবার কেউ কেউ স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল সংগ্রহ করে। কাঁচামালের সংকট হঠাৎ করে নয়। গত অর্থবছরে ক্রয় প্রক্রিয়া শেষ করা যায়নি। আমরা ইউনিটগুলোয় খোঁজ নিয়েছি, সেখানে স্যালাইনের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।"