ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়লে স্যালাইন সংকট ও দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়া হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়লে যাতে স্যালাইন সংকট দেখা না দেয় এবং মূল্যবৃদ্ধি না ঘটে সে জন্যে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের সাথে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও এজন্য প্রস্তুত থাকার থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
গতকাল (মঙ্গলবার) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ব্র্যাক ও ইউএইচসি ফোরাম আয়োজিত ডেঙ্গু সম্পর্কিত প্রস্তুতিকরণ শীর্ষক কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডা. সামন্ত লাল বলেন, "আমার মা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন৷ এই বেদনা আমি বুঝি৷ তাই, ডেঙ্গুর ব্যাপারে আমার চিন্তা আছে৷ ডেঙ্গুতে আমি মাকে হারিয়েছি, আর কেউ যেন না হারায়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়লে হাসপাতালগুলোকে খালি রাখার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছি। যাতে করে পরে সার্জারি বা ভর্তি না করিয়ে চিকিৎসা দেয়া যায় এমন যারা আছে তাদের হাসপাতালে ভর্তি না করে যাদের প্রয়োজন তাদের ভর্তি করা হয়।"
ডেঙ্গু সনাক্তকরণে দেশীয় কিট উদ্ভাবনকে সাধুবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, "ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে এই কিট অনুমোদন পেলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সহজলভ্যভাবে ও স্বল্প খরচে ব্যাপকভাবে বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নিবে।"
মশা নির্মূলে সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, "স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন, নাগরিক, পরিবার সবাইকেই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের ফগিং বিষয়ে কিছু ভুল ধারণা আছে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করব।"
গতবছর দেশে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবে ৩ লাখ ২১,০০০ হাজারেরও বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়। আর মারা যায় প্রায় ১৭০০ জন।
ডেঙ্গুকে একসময় মৌসুমী বলে মনে করা হতো। এখন সারা বছরব্যাপী এই মহামারি দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, ২০২৪ সালে আরও খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০২৪-২০৩০ এর জন্য একটি জাতীয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রণয়ন করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কৌশলটির সুফল পেতে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা ও স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, "মশা মারার ক্ষেত্রে যে-সব ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই জানিয়েছেন যে, ফগিংয়ে কোনো মশা মারা যায় না। এছাড়া ভারতেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় বন্ধ করা হয়েছে ফগিং কার্যক্রম। আমরা এসব বিষয়ে নোট নিয়েছি। এসব বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে যে, সরকার থেকে যদি অর্ডার পায় তো ভ্যাকসিনের উৎপাদন শুরু করবেন। যে-সব কোম্পানি ভ্যাকসিন উৎপাদন করে তাদের সব ভ্যাকসিন এবং স্যালাইন উৎপাদনের জন্য একই প্ল্যান্ট। তাই অন্য কোনো ভ্যাকসিনের সংকট যাতে না দেখা দেয়, সেজন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।"
অনুষ্ঠানে কীটতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল কীটতত্ত্বের অধ্যাপক ডা. কবিরুল বাশার ডেঙ্গু-প্রবণ মশার পরিবর্তনশীল আচরণগত ও প্রজনন পদ্ধতির উপর নতুন গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন।
গবেষণায় দেখা যায়, এই মশা কেবল স্বচ্ছ জলেই নয়, নোংরা নর্দমার পানিতেও বংশবৃদ্ধি করছে৷ ফলে আতঙ্ক শুধু শহরেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামেও। এতে নারীদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি।