জাসদ: নিভু নিভু সেই মশাল!
২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে সারাদেশে ২৪ জন প্রার্থী দিয়ে সর্বোচ্চ ৫টি আসনে জয় পায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন দলটি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ আসনে জয় পেতে চায়।
জাসদ (ইনু) মশাল মার্কা এবার সারাদেশে ৯১ জন প্রার্থী দিয়েছে। ১৯৯১ সালের পর এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী দিয়েছে দলটি।
জাসদ ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মশাল প্রতীকে কারো সাথে জোট না করে এককভাবে নির্বাচন করে। সেই তিনটি নির্বাচনে দলটির কেউ জিততে পারেনি। প্রায় সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
ইসি তথ্যানুসারে দেখা যায়, ১৯৯১ সালে ৬৮ প্রার্থী পায় মাত্র ১ লাখ ৭১ হাজার ১১ ভোট, যা মোট ভোটের ০.৫০ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে ৭৬ প্রার্থী মিলে পায় ৫০ হাজার ৯৪৪ ভোট বা মোট ভোটের ০.১২ শতাংশ। এবং ২০০১ সালে জাসদ (রব), জাসদ (ইনু) এবং বাসদ (মাহাবুব) এর একাংশ মঈন উদ্দিন খান বাদলের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ৭৬ প্রার্থী দিয়ে পায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮২৪ টি ভোট, বা মোট ভোটের ০.২১ শতাংশ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৮১ জন প্রার্থীর কাছে মনোনয়ন বিক্রি করেছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। দলটির পক্ষ থেকে ৯১ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী দেওয়া হয়েছে এবার।
তবে সংসদে যেকোন মূল্যে আসন নিশ্চিত করতে দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার ফেনী-২ আসনে এবারও ২০১৮ সালের মতো আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চাইছেন।
জাসদ (ইনু) আওয়ামী লীগের সমর্থনে ২০০৮ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭টি আসনে প্রার্থী দিয়ে প্রথম ৩টি আসনে জয় পায়, এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির অধিকাংশ দলের বর্জন করা নির্বাচনে দলটি অংশগ্রহণ করে, এবং আওয়ামী লীগের সমর্থনে সারাদেশে ২৪ জন প্রার্থী দিয়ে সর্বোচ্চ ৫টি আসনে জয় পায়। ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগের সাথে এই জোটসঙ্গী দলটি ১২ আসনে প্রার্থী দিয়ে ২টি আসনে জয় পায়।
হাসানুল হক ইনু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা এবারও কিছু আসনে নিজেদের মশাল প্রতীকে এবং কিছু আসনে জোট শরীক নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবো। আশা করি, বিগত নির্বাচনগুলো থেকেও আমরা এবারও ভালো ফলাফল পাব।'
ইনু ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কা নিয়ে কুষ্টিয়া-২ আসন (ভেড়ামারা-মিরপুর) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ সাল থেকে ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সাল পর্যন্ত তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হাসানুল হক ইনু বলেন, "শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ বার্তা পরিষ্কারভাবে দিয়েছেন, জোট আছে, জোট একসঙ্গে নির্বাচন করবে। আসন ভাগাভাগির বিষয়টা আমরা নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হবো। যে কোনো লেনদেনের দর কষাকষি হবে, মন কষাকষি হবে। বন্ধুদের মধ্যে দরকষাকষি হয়, মন কষাকষি হয়। দিনের শেষে হাসিমুখে হাত ধরাধরি করে বেরিয়ে যাব। এখানে জোটের প্রার্থী আসবে, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উঠে যাবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলীয় কৌশল কী হবে সেটা বিবেচনার জন্য আমরা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে বলেছি। সময় আছে, আলোচনা করে দেখব। প্রার্থীরা নৌকা মার্কায় নির্বাচন করবে।"
স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগের কিছু নেতা আওয়ামী লীগের সাথে মতবিরোধ করে আলাদা রাজনৈতিক দল জাসদ গঠন করে। ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর দলটির সাত সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়। মোহাম্মদ আবদুল জলিল হন সভাপতি এবং আ স ম আবদুর রব হন যুগ্ম-আহ্বায়ক। একই বছরে ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অতিরিক্ত কাউন্সিলে ১০৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।
১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১টি ও ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে ৮টি আসন লাভ করে অবিভক্ত জাসদ।
১৯৮০ সালে দলীয় কোন্দলকে কেন্দ্র করে প্রথম জাসদ ভাঙনের কবলে পড়ে, এবং জাসদ থেকে বেরিয়ে একদল নেতা বাসদ গড়ে তোলেন। ১৯৮৪ সালে আরেক দফা ভাঙ্গন হয়। ১৯৮৬ সালে কাজী আরেফ আহমেদ ও হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন অংশ জাসদ (ইনু) হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৯৭ সালে জাসদ (রব), জাসদ (ইনু) এবং বাসদ (মাহাবুব) এর একাংশ মঈন উদ্দিন খান বাদলের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়, আ স ম রব সভাপতি এবং হাসানুল হক ইনু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০০২ সালে আ স ম রবের নেতৃত্বে কতিপয় নেতা জেএসডি নামে জাসদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। ২০০৪ সালে থেকে হাসানুল হক ইনু'র নেতৃত্বে জাসদ ১৪ দল গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে মহাজোট গঠিত হলে জাসদ (ইনু) মহাজোটের শরিক হয়।
বর্তমানে জাসদ মোটদাগে ৩ ভাগে বিভক্ত।
একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি। বাংলাদেশ জাসদ এর সভাপতি শরীফ নুরূল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান। ইনু আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
অপরদিকে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি'র সভাপতি আ.স.ম. আবদুর রব এর অংশ বিএনপির সাথে চলমান সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে আছে, নির্বাচনে যাচ্ছে না। পাশাপাশি আম্বিয়ার অংশও নির্বাচনে যাচ্ছে না।