প্রথম দিনেই ৪৩ আপিল
রিটার্নিং কর্মকর্তার দ্বারা মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার বিরুদ্ধে আপিলের প্রথম দিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন কমিশন ভবনে আপিল বুথে মোট ৪৩টি আবেদন জমা পড়েছে। আপিলকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০টি ছিল স্বতন্ত্র।
এছাড়া আওয়ামী লীগ সহ সাতটি দলের ১৩ জন প্রার্থী এদিন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। এর মধ্যে তিনজন করে আছে জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির। পাশাপাশি একজন করে প্রার্থী আপিল করেছে আওয়ামী লীগ, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও বিকল্পধারার।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সারা দেশের প্রার্থীদের অবৈধ মনোনয়নপত্রের বৈধতা ফেরতের আপিল কার্যক্রম মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে।
এইদিন ১০টি অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আপিল জমা পড়েছে ময়মনসিংহ অঞ্চলের বুথে, ৯টি। তবে রাজশাহী অঞ্চলের বুথে কোনো আপিল জমা পড়েনি প্রথম দিন।
এর আগে প্রার্থীদের জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে সোমবার। সারা দেশে ১৯৮৫ জন প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ৭৩১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র।
এদিকে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে এসে 'মনোনয়ন বাতিল ষড়যন্ত্রের অংশ' বলে অভিযোগ তুলেছেন কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান।
জোটের কোন সমীকরণে মনোনয়ন বাতিল হল কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "জোটের কোন সমীকরণ না। জোট কে তো তিনবার ছেড়ে দিয়েছি। জোট আসুক মাঠে খেলা হোক। ভোটাভুটি হোক, যাচাই হোক দেখি।"
"নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। চুন্নু মাঠে আসুক, আমরা ভোট করি। কে কত ভোট পায় দেখি। আমি মনে করি নেত্রী এবার জোটে দিবেন না। এবার প্রতিযোগিতা পূর্ণ নির্বাচন হবে।"
মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় আপিল করতে এসে, পাবনা-২ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনী বলেন, "আমার ছোট একটা ক্রেডিট কার্ডের ঝামেলা ছিল, যা আমি জানতাম না…ক্রেডিট কার্ডের অ্যামাউন্ট পরিশোধ করে ইসিতে এসেছি।"
"যে অভিযোগটা এসেছে এটা আসলেই আমার দোষ ছিল। কারোর ষড়যন্ত্র দেখছি না। এটি আমি খেয়াল করিনি। তবে আশা করছি আমার মনোনয়নপত্রের বৈধতা পাবো", তিনি যোগ করেন।
কিশোরগঞ্জ-২ থেকে নির্বাচন করতে চাওয়া বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব) আখতারুজ্জামানেরও মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। আপিলের বিভিন্ন বিষয় জানতে ইসি এসেছিলেন।
তিনি বলেন, "রিটার্নিং অফিসার দুটি কারণে আমার মনোনয়ন বাতিল করেছেন। প্রথমটি হল অতীতে আমার নামে কোন মামলা আছে কি-না সেই জায়গায় আমি কিছু লিখি নি। আরেকটি জায়গায় তথ্য চেয়েছিলো সেখানে আমি লিখেছিলাম 'প্রযোজ্য নয়'। এই দুই কারণে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।"
বিকালে সার্বিক বিষয় পরিদর্শন করে সিইসি কাজি হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় তিনি বলেন, "নমিনেশন সাবমিশনের পরে বাছাই হয়, বাছাইয়ের পরে রিটার্নিং অফিসাররা অনেকগুলো নমিনেশন একসেপ্ট করে নেন এবং অনেকগুলো প্রত্যাখ্যান করেন। যারা প্রত্যাখ্যাত হন তারাই কিন্তু আপিল করতে পারেন। আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল ফাইল করতে পারবে। এরপর এগুলো আপিল শুনানিতে দাখিল করা হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল শুনানি হবে।"
আচরণবিধি মানছেনা প্রার্থীরা, এখন পর্যন্ত শোকজ ৭৫ প্রার্থীকে
গত ৮ নভেম্বর বিচার বিভাগীয় নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি গঠনের পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭৫ এর মত প্রার্থীকে বিভিন্ন অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকানো যাচ্ছে না। আমরা একের পর এক শোকজ করে যাচ্ছি, সময় যত গড়াচ্ছে তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।"