ভোটের প্রচার শুরুতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী, সিলেটজুড়ে সাজ সাজ রব
প্রতিবারই সিলেট থেকে নির্বচনী প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে প্রতীক বরাদ্দের দুদিন পর আজ বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) সিলেট আসছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সকালে সিলেটে এসে তিনি হযরত শাহজালাল (র.) ও শাহপরান (র.) এর মাজার জিয়ারত করবেন। এরপর দুপুরে নগরের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে সিলেটজুড়ে দলের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সফরকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ-সংগঠনগুলো। মঙ্গলবারও প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। জনসভায় ১০ লাখ লোক সমাগমের আশা করা হচ্ছে। নৌকার আদলে তৈরি করা হচ্ছে সভামঞ্চ।
এই সমাবেশের মাধ্যমে দেশজুড়ে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য দলটির।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফরকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে সোমবারই প্রতীক বরাদ্ধ করা হয়েছে। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। তবে সিলেটে এখনো পর্যন্ত প্রচারণা খুব একটা জমেনি। এবারের নির্বাচনে বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো অংশ নিচ্ছে না। এ ছাড়া সংসদের প্রধান বিরোধী দল– জাতীয় পার্টি থেকেও সিলেট-১ আসনে কেউ প্রার্থী হননি। এরফলে সিলেটে এখনো নির্বাচনী উত্তাপ ছড়ায়নি। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশ দেখে যাতে নির্বাচন নিয়ে সারাদেশের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ মেতে ওঠে, তার সফল বাস্তবায়ন ঘটাতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
সিলেট নিয়ে দেশের রাজনীতিতে কিংবদন্তি রয়েছে, সিলেট-১ আসনে যে দল বিজয়ী হয়– সেই দলই সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার পর থেকেই এমনটি ঘটে আসছে। হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.)-সহ ধর্মীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মাজার রয়েছে সিলেটে। ফলে সব রাজনৈতিক দল সিলেটকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এখান থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয় তাঁদের। এবারও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধারা বজায় রাখছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করে সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে সিলেটের নেতা-কর্মীরা চাঙা হয়ে উঠেছেন।
সমাবেশ সর্বশেষ প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করতে মঙ্গলবার সিলেট আসেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক। দুপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি। এরআগে গত ১৩ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ প্রায় এক ডজন কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতিতে সিলেটের একটি কনভেনশন হলে বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিলেট বিভাগের চার জেলার আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বুধবারের জনসমাবেশ স্মরণকালের সর্ববৃহৎ করার নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সভায় বিভাগের ১৯টি আসনের সকল নৌকার প্রার্থীকে অন্তত ১০ হাজার করে লোক নিয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট আগমনকে কেন্দ্র করে চাঙা হয়ে ওঠেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগর। বিভিন্ন সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে তোড়ন। চলছে দফায় দফায় সভা ও প্রচার মিছিল। সবমিলিয়ে শেখ হাসিনার প্রথম নির্বাচনী জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত করার লক্ষ্য আওয়ামী লীগ নেতাদের। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য নগরের বিভিন্ন সড়ক সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়েছে। ফলে নতুন রূপ নিয়েছে সিলেট নগর।
আ. লীগ নেতারা জানান, জনসভায় সিলেট বিভাগের নৌকা এবং জোটের শরীক দলের প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তাদের পক্ষে সিলেটবাসীর কাছে ভোটও চাইবেন তিনি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরের উন্নয়ন ও সাফল্য জনগণের কাছে তুলে ধরবেন তিনি। আগামীতে ক্ষমতায় এলে কি করবেন– সেব্যাপারেও বিভিন্ন প্রতিশ্রতি দিতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট সফর ও জনসভা প্রসঙ্গে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, আলীয়া মাঠে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় স্মরণকালে বৃহৎ জনসমাবেশ করার সকল প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিভাগের প্রতিটি জেলা উপজেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা সমাবেশে এসে যোগ দেবেন। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। জনসভায় অন্তত ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, নির্বাচনী ট্রেন থেকে নেমে ভুল করেছে বুঝতে পেরে বিএনপি-জামায়াত ৭ জানুয়ারি ভোটার উপস্থিতি কমানোর ষড়যন্ত্র করছে। তারা আগুন সন্ত্রাস করে মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা করছে। কিন্তু, শেখ হাসিনার সমাবেশে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি দেখে তাদের মাথা আরেকবার খারাপ হবে। সিলেট থেকে সারাদেশে নির্বাচনী উৎসবের জোয়ার ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
জানা যায়, বুধবার সকালে বিমানযোগে সিলেট পৌঁছে মাজার জিয়ারত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সার্কিট হাউসে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিয়ম করবেন। দুপুর ২ টায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সরকারি আলীয়া মাদরাসা মাঠে দলীয় জনসভায় যোগ দেবেন সভানেত্রী।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে সিলেটবাসী বরণ করে নিতে প্রস্তুত। এখান থেকেই শুরু হবে সারা দেশে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার। শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দিয়ে যাবেন, সেই নির্দেশনাই আমরা পালন করতে প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে সিলেট নগরকে নিরাপত্তার চাদরে মোড়ে দেয়া হয়েছে। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। কিছু সড়কে যান চলাচল মঙ্গলবার থেকে সীমিত করে দেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশপাশি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়া তৎপর রয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে নিশ্ছিদ্র করতে আইনশৃঙ্খখলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। সাদা পোশাকে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা মাঠে তৎপর রয়েছে।