শিল্পে ব্যবহারের জন্য সিলিন্ডারভর্তি ভোলার গ্যাস ঢাকা এলো
কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) হিসেবে সিলিন্ডারে ভরে ভোলার প্রাকৃতিক গ্যাস দেশের শিল্পকারখানাগুলোতে পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ গ্যাস সরবরাহ শুরু হলো। গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় গেছে গ্যাসের প্রথম সরবরাহ।
এদিন রাজধানীর একটি হোটেলে সিলিন্ডারভিত্তিক এ গ্যাস সরবরাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া হবে।
প্রতিটি সিলিন্ডারে গ্যাস থাকবে সাড়ে তিন হাজার ঘনমিটার। বিশেষ ট্রাকে করে এ গ্যাস পরিবহন করা হচ্ছে। এ সিএনজির প্রতি ঘনমিটারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা। যদিও পাইপলাইন থেকে শিল্প কারখানাগুলো এখন সরাসরি গ্যাস পাচ্ছে ৩০ টাকায়।
নসরুল হামিদ বলেন, 'বাংলাদেশে প্রথমবার এভাবে গ্যাস পরিবহন করা হলেও বিশ্বের বহুদেশেই এর প্রচলন রয়েছে। এটি পাইপলাইনের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। পাইপলাইনের চেয়ে কম খরচে এবং দ্রুত এভাবে গ্যাস সরবরাহ করা যায়।'
প্রতিমন্ত্রী জানান, ভোলার গ্যাস ব্যবহার নিয়ে ইতোমধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। 'স্বল্পমেয়াদি শেষ হয়ে গেলে আমরা দীর্ঘমেয়াদের দিকে যাব,' বলেন তিনি।
নসরুল হামিদ বলেন, 'ভবিষ্যতে ভোলা থেকে বরিশালে একটি গ্যাস পাইপলাইন তৈরি করা হবে। সেখান থেকে খুলনায় একটি ট্রান্সমিশন লাইন যাবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এবং পূর্বাঞ্চল এ গ্যাসের আওতায় আসবে।'
'উত্তরাঞ্চলেও গ্যাস সরবরাহের চিন্তা আছে। রংপুর পর্যন্ত ইতোমধ্যে গ্যাস পাইপলাইন চলে গেছে,' বলেন প্রতিমন্ত্রী।
ভোলার গ্যাস সেখানে স্থানীয় পর্যায়ে আবাসিক গ্রাহকদের নিকট সরবরাহ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান নসরুল হামিদ।
অনুষ্ঠানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম বলেন, 'ভোলা থেকে দিনে এখন ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ধাপে ধাপে তা আরও বাড়ানো হবে।'
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, 'চাহিদা মেটাতে নানা উপায়ে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন নতুন কূপ খনন করে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। এলএনজি আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে গ্যাস আনার চিন্তা করা হচ্ছে।'
ভোলা থেকে গ্যাস সরবরাহের কাজটি করছে বেসরকারি কোম্পানি ইন্ট্রাকো। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ আলী বলেন, 'পরীক্ষামূলকভাবে আগে থেকেই গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। বর্ষাকাল, বৈরী প্রকৃতিসহ নানা কারণে সরবরাহ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে।'
এর আগে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড জানায়, আজ (২১ ডিসেম্বর) থেকে ভোলার তিনটি ফিল্ডের গ্যাস রাজধানীর আশপাশের গ্যাস সংকটে থাকা শিল্পাঞ্চলে পাঠানো হবে।
বেসরকারি কোম্পানি ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন এ গ্যাস সরবরাহ করবে বলে বুধবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. সালাহউদ্দিন জানান, ইন্ট্রাকো প্রাথমিকভাবে কারখানাগুলোতে — বিশেষ করে গাজীপুর এবং এর আশেপাশের এলাকায় যেখানে পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকে — প্রতিদিন প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করবে।
ইন্ট্রাকো'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ আলী বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যেই সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছি। বৃহস্পতিবার থেকে [গ্যাস সরবরাহের] আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।'
ইন্ট্রাকো গ্যাস খুচরা বিক্রির জন্য প্রতি ইউনিট পাবে ৩০ টাকা ৫ পয়সা।