পুলিশ যেকোনো সময় আপনার গাড়ি রিকুইজিশন করতে পারে, এ বিষয়ে যা জানা থাকা দরকার
অনেকের কাছে কাজটি খুব আপত্তিকর মনে হলেও, আইন অনুসারে জনস্বার্থে যেকোনো সময় যেকোনো যানবাহন রিকুইজিশন বা ব্যবহারের জন্য গ্রহণ করতে পারে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ এর ১০৩এ (১) ধারায় বলা হয়েছে, জনস্বার্থে উক্ত যানবাহনের প্রয়োজন হলে পুলিশ কমিশনার লিখিত আদেশে অনধিক সাত দিনের জন্য কোনো যানবাহন রিকুইজিশন করতে পারবেন।
তবে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে হাইকোর্ট বলেন, পুলিশ ব্যক্তিগত মালিকানাধীন গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্যাক্সি রিকুইজিশন করতে পারবে না।
সুতরাং, কেবল মাত্র ভাড়া গাড়ি বা বাস বা পিকআপের মতো গণপরিবহনের ক্ষেত্রে রিকুইজিশন প্রযোজ্য।
২০২২ সালের ৮ জুন হাইকোর্ট এই রায়ের অপারেটিভ অংশটি ঘোষণা করেন।
সেখানে পুলিশকে রিকুইজিশন করা গাড়ি সাত দিনের বেশি না রাখার এবং এগুলো ব্যক্তিগত বা পরিবারের কাজে ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
রায়ে আরও বলা হয়, রিকুইজিশনের আগে ব্যক্তিগত বা কোম্পানির গাড়ির মালিককে অবশ্যই কারণ উল্লেখ করে নোটিশ দিতে হবে।
একই সঙ্গে, রিকুইজিশন করা গাড়ির ক্ষতিপূরণ এবং প্রাত্যাহিক ভাতা নির্ধারণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
তবে, এই আইনের কারণে গাড়ির চালকেরা ভুক্তভোগী হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগেরহাটের এক মাইক্রোবাস চালক বলেন, 'তারা আমাদের খাবার, হাত খরচ ও জ্বালানির খরচ দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু ফরিদপুরে আমার গাড়ি রিকুইজিশন করা হলে তারা আমাকে পুলিশ ব্যারাকে থাকার জন্য নিয়ে যায়, তবে তারা আমাকে কিছুই দেয়নি। আমার পক্ষে সেখানে থাকা এবং পাঁচ দিন তাদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া-আসা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল।'
এদিকে হাইকোর্টের ২০২২ সালের রায়ে বলা হয়েছে, গাড়ির ক্ষতি হলে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
রিকুইজিশনের বিষয়ে কোনো অভিযোগ উঠলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া রোগী বহনকারী, পঙ্গু বা বিদেশগামী যাত্রী বহনকারী গাড়ি রিকুইজিশন করা যাবে না।
এমনকি রিকুইজিশন করা গাড়ির বিস্তারিত তথ্যসহ একটি রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে।
জাতীয় নির্বাচনের মাত্র দুই দিন বাকি থাকায়, ভোটের সময় দায়িত্ব পালনের জন্য বিপুল সংখ্যক পরিবহনের প্রয়োজন হবে বলে পুলিশ এই আইন বেশি প্রয়োগ করছে।
গাবতলী ও সায়েদাবাদের পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি পরিবহন কোম্পানির কাছ থেকে অন্তত পাঁচ থেকে আটটি বাস রিকুইজিশন করেছে পুলিশ।
একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাহমিনা আলম বলেন, 'ট্র্যাফিক পুলিশ বেশ কয়েকবার আমার অফিসের গাড়িটি রিকুইজিশন করার জন্য থামিয়েছে। কিন্তু যেহেতু মোংলা ইপিজেডের বিভিন্ন প্রকল্প তদারকির জন্য মোংলায় আসা ভারতীয় নাগরিকরা সাধারণত গাড়িটি ব্যবহার করেন, তাই যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের পর পুলিশ গাড়িটি ছেড়ে দেয়। ঝামেলা এড়ানোর জন্য, আমি এখানকার ডেপুটি কমিশনারের (ট্র্যাফিক) কাছে একটি আবেদন করি। আমার গাড়িটি যাতে আর রাস্তায় থামানো না হয় তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন।'
গত কয়েকদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনে যানবাহনের চাহিদা সংক্রান্ত পোস্টগুলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষও তাই নতুন করে এই আইন সম্পর্কে জানতে উৎসুক হয়ে উঠেছে।
কয়েক দশক ধরে কার্যকর থাকলেও মূলত সংকটের সময় আইনটি ব্যবহার করে পুলিশ।