চালুর এক সপ্তাহের মধ্যে জার্মানিতে রপ্তানি হবে আরএফএলের দেশে তৈরি প্রথম ই-বাইক
স্থানীয় পর্যায়ে পরিচিত করানোর পরপরই দেশে তৈরি প্রথম বৈদ্যুতিক বাইসাইকেল রপ্তানি হতে যাচ্ছে ইউরোপের বাজারে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয়ভাবে তৈরি 'দুরন্ত' ইলেকট্রনিক বাইসাইকেল (ই-বাইক) দেশের বাজারে নিয়ে এসেছে আরএফএল গ্রুপ। দেশে তৈরি প্রথম এই ই-বাইকটি মোটর এবং প্যাডেল উভয় ব্যবহার করে চালানো যাবে।
দেশের রাস্তায় চালু হওয়ার আগেই এ বাইসাইকেলটি আন্তর্জাতিক ক্রয়াদেশ পেতে শুরু করেছে। আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরএন পাল বৃহস্পতিবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, প্রথম চালানটি আগামী সপ্তাহের মধ্যে জার্মানিতে পাঠানো হবে।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত আরএফএল গ্রুপের নিজস্ব কারখানা রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে এ ই-বাইকটি তৈরি করা হচ্ছে। বছরে এ কারখানাটির প্রায় পাঁচ হাজার ইউনিট ই-বাইক তৈরি করতে পারবে।
রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মো. মাহমুদুর রহমান জানান, ক্রয়াদেশের আওতায় ৩৬ হাজার মার্কিন ডলারের বিপরীতে তারা বৈদ্যুতিক সাইকেলগুলো রপ্তানি করবেন।
এর আগে এদিন আরএন পাল স্থানীয় গ্রাহকদের হাতে সাশ্রয়ী মূল্যের বৈদ্যুতিক বাইসাইকেল তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে রাজধানীতে দুরন্ত ব্র্যান্ডের ই-বাইকের কভার উন্মোচন করেন।
চিফ অপারেটিং অফিসার মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, 'আমাদের ই-বাইক রপ্তানি করার জন্য ব্রাজিল এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। শীঘ্রই তারা তাদের চূড়ান্ত ক্রয়াদেশ দিতে আমাদের কারখানা পরিদর্শনে আসবে।'
ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরএন পাল বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ই-বাইকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ই-বাইকের বিশ্বব্যাপী বাজারের আকার ১২০ বিলিয়ন ডলার এবং এটি ক্রমশ দ্রুত বাড়ছে।
'ই-বাইক প্রথাগত বাইসাইকেল এবং মোটরচালিত যানবাহনের একটি সুবিধাজনক এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশ্ববাজারে প্রবেশের এটিই সঠিক সময়, নাহলে আমরা প্রতিযোগিতায় হারতে পারি,' উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেরিতে হলেও বাংলাদেশে ই-বাইকের ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং দেশের শহরাঞ্চলে ই-বাইক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমাদের অনুমান অনুযায়ী দেশ ১০ হাজার ইউনিট ই-বাইকের চাহিদা রয়েছে।
দেশের বাজারে ই-বাইক চালু করার বিষয়ে তিনি বলেন, 'এ ব্যবসায় প্রবেশের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে উচ্চমানের পরিবেশবান্ধব পণ্য পৌঁছে দেওয়া। আশা করি গ্রাহকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাব।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন দেশে চীনের তৈরি ব্যাটারি অ্যাসেম্বল করা হচ্ছে। তবে খুব শীঘ্রই আমরা নিজস্ব ব্যাটারি উৎপাদনে যাব।
বাইকটির ফিচার সম্পর্কে চিফ অপারেটিং অফিসার মাহমুদুর রহমান বলেন, 'দুরন্ত ই-বাইকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি ৩৬ ভোল্টের লিথিয়াম ব্যাটারিতে চলে। এ ব্যাটারিও আমাদের কারখানায় উৎপাদিত হচ্ছে।'
তিনি জানান, ই-বাইকটি ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। একবার চার্জ দিলে অনায়াসে ৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। বাইকটি সম্পূর্ণ চার্জ হতে প্রায় ৪–৫ ঘণ্টা সময় লাগবে। এতে বিদ্যুৎ খরচ হবে এক ইউনিটের মতো।
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, দুরন্ত ই-বাইক কিনলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের জন্য ছয় মাসের ওয়ারেন্টি পাওয়া যাবে। এছাড়া একজন গ্রাহক প্রথম ছয় মাসে চারটি ফ্রি সার্ভিসিং সুবিধা পাবেন।
প্রাথমিকভাবে দুরন্ত ই-রাইডার ১০১ ও দুরন্ত ই-রাইডার ২০১ মডেল দুটি বাজারে পাওয়া যাবে। পরীক্ষামূলক অবস্থায় থাকা আরও দুটি মডেল শীঘ্রই চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
দুরন্ত ই-রাইডার ১০১ মডেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৪২ হাজার টাকা এবং দুরন্ত ই-রাইডার ২০১ মডেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৫৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছে।