রাস্তা সংস্কার না করেই বাড়তি যানবাহনের চাপে বেসামাল বাবুবাজার ব্রিজ
গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজধানীর প্রবেশমুখ পোস্তগোলা ব্রিজ (বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু) সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় পদ্মাসেতু হয়ে আসা যানবাহনগুলোর অতিরিক্ত চাপ পড়েছে বাবুবাজার ব্রিজের (বুড়িগঙ্গা ২য় সেতু) উপর। এতে বাবুবাজার ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে নাজিরেরবাগ এলাকা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এর মূলে রয়েছে নয়াবাজার এলাকার রাস্তার সংস্কার কাজ শেষ না হওয়া।
সংস্কারের জন্য ২৪ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পুরোপুরি বন্ধ থাকে পোস্তগোলা ব্রিজ। এ ছাড়াও আগামী ১, ৪ ও ৮ মার্চ পুরোপুরি বন্ধ থাকবে ব্রিজটি। যানবাহন চলাচল করতে হবে বিকল্প পথে। এ বিড়ম্বনা চলবে আগামী ৮ মার্চ পর্যন্ত।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পোস্তগোলা ব্রিজের উপর দিয়ে সকল ধরনের যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকায় সেদিন বাবুবাজার ব্রিজে অধিকাংশ গাড়িরই ২-৩ ঘণ্টা সময় লেগেছে ব্রিজটি পাড় হতে। সোমবারেও পোস্তগোলা ব্রিজে সব যান চলাচল বন্ধ থাকায় বাবুবাজার ব্রিজ হয়েই অধিকাংশ গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করে।
নয়াবাজারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অসম্পূর্ণ রাস্তার কাজের জন্য কিছু এলাকায় এক লেনের রাস্তা সরু হয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। কাজটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে এবং নির্মাণসামগ্রী রাস্তায় রেখে যাওয়ায় ট্র্যাফিক চলাচল সীমিত হয়ে গেছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান টিবিএসকে বলেন, "আমরা কাজ শুরুর ২০ দিন আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে রাস্তাটির সংস্কার কাজ শেষ করতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা করেনি। তারা কাজ বন্ধ রেখেছে তবে রাস্তার প্রায় অর্ধেকটাই আটকে রেখেছে।"
এদিকে ডিএসসিসির মুখপাত্র মো: আবু নাসের বলেছেন, ২০ দিনের নোটিশ কাজ শেষ করার জন্য অপর্যাপ্ত।
তিনি আরো জানিয়েছেন, "রাস্তা মেরামতের জন্য সাধারণত ন্যূনতম তিন মাস সময় লাগে। পোস্তগোলা ব্রিজ মেরামতের বিষয়ে সওজ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তি রাস্তার কাজ সময়মতো শেষ করার জন্য সুবিধা দিতে পারত। তবুও সিটি কর্পোরেশন ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাটিকে যুক্তিসঙ্গতভাবে ব্যবহার উপযোগী করে তুলেছে।"
২০২০ সালের ৩০ জুন উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের ধাক্কায় পোস্তগোলা সেতুর দুটি গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। প্রাথমিক মেরামতের পর সেতুটি চালু হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোপুরি মেরামতের কাজ শুরু করে সওজ। আগামী ৮ মার্চ পর্যন্ত পোস্তগোলা সেতুর দুটি গার্ডারের মেরামত ও রেট্রোফিটিংয়ের কাজ করা হবে।
পোস্তগোলা সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি হালকা যানবাহনগুলোকে নির্দিষ্ট দিনে ট্র্যাফিক প্রবাহ ঠিক রাখতে বিকল্প রুট ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পোস্তগোলা সেতুটি মেরামতকালীন সময়ে বেশ কয়েকটি বিকল্প রাস্তা যেমন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাঁট সহ অন্য পথ ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হলেও অধিকাংশ যানবাহন বাবুবাজার ব্রিজের দূরত্ব কম হওয়ায় এবং সুবিধার জন্য এই ব্রিজ ব্যবহার করায় চাপ বেশি পড়ছে।
যাত্রীদের ভোগান্তি, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি
এদিকে এবড়োখেবড়ো রাস্তার মাঝেই তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ফলে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে নেমেই গতি রোধ করে চলতে হচ্ছে গাড়িগুলোকে।
শনিবার বাবুবাজার ব্রিজে তিন ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকা হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বরিশাল থেকে আসতে যে সময় লাগছে তার থেকে বেশি সময় লাগছে বাবুবাজার থেকে সায়েদাবাদ যেতে।"
একই রকম সমস্যার সম্মুখীন হন আরেক যাত্রী মুনতাহ ইসলাম। বরিশাল থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় বাবুবাজার ব্রিজে পৌঁছালেও সেতু পার হয়ে মিরপুর পৌঁছাতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে তার।
এমন পরিস্থিতি স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মহসিন জানান, চলমান রাস্তা খনন ও ধুলোর কারণে বিক্রি কমে গেছে। তিনি বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে।
রিকশাচালক আব্দুল শাহিন জানান, যানজটের কারণে তার যাত্রীর সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে। অন্য রাস্তাতেও চলাচলের সুযোগ কম কারণ পুরান ঢাকার অধিকাংশ রাস্তাই কেটে রাখা হয়েছে।
যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছেন ট্র্যাফিক কর্মকর্তারা
ট্র্যাফিক পুলিশ জানিয়েছে, পদ্মা সেতু ব্যবহার করা বেশিরভাগ যানবাহন এখন বাবুবাজার ব্রিজ দিয়েই যাচ্ছে।
নয়াবাজার এলাকার ইনচার্জ সার্জেন্ট মোরশেদুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "শনিবার আমরা ২০ কিলোমিটারের বেশি যানজটের সম্মুখীন হয়েছি। ডিএসসিসি অর্ধেক রাস্তা আটকে না রাখলে পরিস্থিতি সামলানো অনেক সহজ হতো।"
অতিরিক্ত কর্মী মোতায়েন করেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে সওজের কর্মকর্তারা বলেছেন, এই এলাকায় সঠিক ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই উল্লেখযোগ্যভাবে ভোগান্তি কমতে পারে। সওজ মেরামতের সময় বিকল্প রুট ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করলেও বেশির ভাগ যানবাহন বাবুবাজার ব্রিজ ব্যবহার করছে এবং এর জন্য চাপ বাড়ছে।