সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করতে হবে কার্ডিয়াক স্টেন্ট: ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর
আমদানিকারকদের দাবি উপেক্ষা করে ডিসেম্বরে সর্বশেষ সমন্বয় করা দামেই কার্ডিয়াক স্টেন্ট (হার্টের রিং)-বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক শেষে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল আলম বলেন, 'গত বছরের ১২ ডিসেম্বর হার্টের রিংয়ের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, সে দামেই বিক্রি করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'কেউ এ সিদ্ধান্ত মেনে না চললে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ড্রাগ অ্যান্ড কসমেটিকস আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দাম নির্ধারণ কমিটির এক সদস্য দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কমিটি এর আগে হার্টের রিংয়ের দাম নির্ধারণ করেছে সেটিই থাকবে। নতুন করে দাম কমছে না বা বাড়ছে না। এরপর দামের বিষয়ে কোনো আলোচনার প্রয়োজন হলে স্টেন্ট আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করবেনা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, মূল কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে বসবে।'
স্বাস্থ্যসচিব জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে বৈঠকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, 'ওষুধের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। ওষুধ ও হার্টের রিং, উভয়ের দাম নির্ধারণেই ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে কর্মকর্তারা বৈঠক বসেছে। দাম কমাতেই হবে।'
অন্যদিকে, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ২৭টা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ৪৪ ধরনের হার্টের স্টেন্টের দাম কমিয়েছে ডিজিডিএ। রিং প্রতি ৩% থেকে ৪৬% পর্যন্ত দাম কমিয়েছিল ডিজিডিএ।
কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিন থেকেই (১৬ ডিসেম্বর) ইউরোপীয় স্টেন্ট আমদানিকারকরা দাম পুনর্নিধারণের দাবি জানিয়ে হাসপাতালগুলোকে তাদের রিং ব্যবহার না করার জন্য চিঠি দিয়েছে।
আমদানিকারকদের এই সিদ্ধান্তের ফলে হৃদ্রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
হার্টের রিংয়ের দাম পুনর্নির্ধারণ বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে নতুন করে নাম নির্ধারণের জন্য হাইকোর্টে রিটও করেছিলে ইউরোপীয় স্টেন্ট আমদানিকারকেরা।
তবে দাম পুনর্নিধারণের বিষয়ে ডিজিডিএ'র আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ জানুয়ারি রিট প্রত্যাহার করে নিয়েছিল তারা।
ইউরোপীয় রিং আমদানিকারকেরা তখন থেকে বলছে, এই দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে শুধু আমেরিকার তিনটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ২০১৭ সালে মার্কআপ ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়েছে। আমদানিকারক বাকি ২৪ প্রতিষ্ঠানের স্টেন্টের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কআপ ফর্মুলা মানা হয়নি। তাই মূল্য নতুন করে সমন্বয় না-করা পর্যন্ত স্টেন্ট সরবরাহ ও বিক্রি বন্ধ রেখেছে তারা।
এপিক টেকনোলজিসের কর্ণধার ওয়াসিম আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা ওষুধ প্রশাসনের মিটিংয়ে থাকার জন্য অনুমতি চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের মিটিংয়ে রাখেনি। তাদের আশ্বাসে আমরা হাইকোর্ট থেকে রিট প্রত্যাহার করেছি, এখন তারা দাম বাড়ালোনা। এখন আমরা কি করব জানিনা। আমেরিকান স্টেন্ট আমদানিকারক তিন কোম্পানিকে সুবিধা দিতেই তারা এটি করল।'
হাসপাতালে ইউরোপীয় স্টেন্ট এখন থেকে ব্যবহার করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি আমরা।