‘৩ ঘণ্টা পর আমরা অজ্ঞান হয়ে যাই’: বেইলি রোড ট্র্যাজেডির একজন বেঁচে যাওয়া মানুষের গল্প
ঢাকার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের খানাজ রেস্টুরেন্টে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে নৈশভোজ করতে গিয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী সুমাইয়া ও তার স্বামী রাকিব হাসান।
ওই ভবনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে শুক্রবার সুমাইয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'রাত তখন প্রায় ১০টা। ওয়েটার আমাদের বলেন যে রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে খাবার অর্ডার করতে হবে। কারণ এরপর তাদের কিচেন বন্ধ হয়ে যাবে।'
তিনি বলেন, 'আমরা বসে মেনুকার্ড দেখছিলাম, তখন হঠাৎ দেখি সবাই হুড়মুড় করে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমরাও তাদের অনুসরণ করলাম। কিছুক্ষণ পরই দেখি চারপাশ ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সবাই সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছিল। আমরাও তাদের সঙ্গে উপরে উঠতে থাকলাম। উপরে উঠতে গিয়ে আমরা আরও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। উপর থেকে গরম বাতাস আসছিল, আর নিচ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কোন পথে যেতে হবে। আবার কোথায় আগুন লেগেছে আমরা সেটাও বুঝতে পারছিলাম না।'
সুমাইয়া বলেন, 'তখন উপর থেকে কেউ একজন বলেন উপরে আগুন লেগেছে, আপনারা নিচে নামেন। আবার আমরা নিচে নেমেছি। আমরা সিঁড়ি দিয়ে নেমে দেখি মেইন গেট বন্ধ, আর বাইরে আগুন জ্বলছে। তাই আমরা বের হতে পারিনি।'
তিনি বলেন, 'আমরা সিঁড়ি দিয়ে তিন তলা পর্যন্ত উঠলাম। ধোঁয়াটা ততক্ষণে এতটাই বিষাক্ত হয়ে গেছে যে আমরা আর এর উপরে উঠতে পারিনি। ওই ফ্লোরে একটা শোরুম ছিল, আমরা সেখানে ঢুকলাম। সেখানে আমরা ছাড়াও ওই শোরুমের দুইজন স্টাফও ছিলেন।'
তিনি আরও বলেন, 'কিছুক্ষণ পর সেখানেও ধোঁয়া ঢুকতে শুরু করে। আমরা শোরুমের ভেতরের ওয়াশরুমে চলে যাই। আমি আমার দুলাভাইকে সাহায্যের জন্য ফোন করেছিলাম।'
ওই নারী বলেন, 'আমরা সেখানে আড়াই ঘণ্টা আটকে ছিলাম, বেঁচে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিলাম। আমরা আমাদের শরীরে পানি ঢালছিলাম। আমরা চেষ্টা করছিলাম যেন গ্যাস বাথরুমের ভেতরে না আসে। কিন্তু এক পর্যায়ে গ্যাস ঢুকে পড়ে।'
তিনি বলেন, 'খুব চেষ্টা করছিলাম আমরা যেন অজ্ঞান না হই। তবে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে থেকে শেষ মুহূর্তে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আমাদের উদ্ধার করেন। তারা আমাদের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে এবং কিছুক্ষণ পরে আমাদের জ্ঞান ফিরে আসে। এরপর সিঁড়ি দিয়ে আমাদের নামিয়ে আনা হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি ও আমার স্বামী দুজনেই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।'
সুমাইয়া ও রাকিব এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বৃহস্পতিবারের ওই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৬ জন নিহত হন। ভবনটিতে একটি জুস বার এবং একটি চা-কফির দোকানসহ আটটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি মোবাইল ফোন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও কাপড়ের দোকান ছিল।