শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন ছিল 'অনুমান ভিত্তিক': হাইকোর্ট
রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেছিল, সেই প্রতিবেদন 'অনুমান ভিত্তিক' ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।
এছাড়া ওই তদন্ত কমিটির ৪ জন সদস্যের মধ্যে ৩ জনই একটি নির্দিষ্ট মেডিকেল কলেজের (মুগদা মেডিকেল) ছিল বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, 'দেশে অনেক দক্ষ চিকিৎসক আছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির ৪ জনের মধ্যে ৩ জন একই মেডিকেল কলেজের (মুগদা মেডিকেল), যা সন্দেহজনক।'
শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গত ২০ ফেব্রুয়ারি নতুন করে কমিটি গঠন করে দিয়ে, লিখিত আদেশে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। ৪ পৃষ্ঠার ওই লিখিত আদেশ আজ মঙ্গলবার (৫ মার্চ) প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
গত ২৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। এরপর ২৯ জানুয়ারি প্রতিবেদনের ওপর শুনানির সময় ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে সমালোচনা করেন আদালত।
পরবর্তীতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন হাইকোর্ট। ওই দিনের লিখিত আদেশ মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়।
লিখিত আদেশে বলা হয়েছে, 'আমরা সতর্কতার সঙ্গে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক বিবেচনা করেছি এবং রেকর্ডে থাকা তথ্যগুলো পর্যালোচনা করেছি। এতে কোনো বিতর্ক নেই যে, শিশু আয়ানকে শুধু খৎনার জন্য অস্ত্রোপচারের উদ্দেশ্যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। এটাও বিতর্কিত নয় যে শিশু আয়ানের খৎনা করার আগেই অ্যানেস্থেসিয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।'
'কিন্তু শিশু আয়ানের মৃত্যু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত চার সদস্যের কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেই প্রতিবেদনে শিশু আয়ানের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোনো ইতিবাচক মতামত দেয়নি। বরং শিশু আয়ান ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা রোগে ভুগছিলেন বলে অনুমান করে রিপোর্ট দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তাহলে আয়ানের কীভাবে মৃত্যু হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।'
'আদালতের কাছে মনে হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সন্তোষজনক নয়। আমাদের দেশে আরও দক্ষ চিকিৎসক আছে বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটির ৪ জনের মধ্যে ৩ জন একই মেডিকেল কলেজের, যা সন্দেহজনক। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং উন্নতি নিশ্চিত করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা অপরিহার্য। এ কারণে আমরা নতুন করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিচ্ছি। তারা এক মাসের মধ্যে আদালতে নতুন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে,' বলা হয় লিখিত আদেশে।
আদেশ অনুযায়ী, নতুন কমিটির প্রধান হলেন— শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও অ্যানেস্থেসিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ.বি.এম. মাকসুদুল আলম। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন— বিএসএমএমইউর পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক সুশঙ্কর কুমার মণ্ডল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান, ঢাকা শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারির অধ্যাপক ডা. আমিনুর রশীদ ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসন), সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাথী দস্তিদার।
গত ৩১ ডিসেম্বর খৎনা করানোর জন্য আয়ানকে রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছিল। পরে শিশুটিকে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়। কিন্তু অনুমতি ছাড়া 'ফুল অ্যানেসথেসিয়া' (জেনারেল) দিয়ে চিকিৎসক আয়ানের খৎনা করান বলে পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়।
পরে জ্ঞান না ফেরায় আয়ানকে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর বাড্ডা থানায় আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ বাদী হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল ও ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক, অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একজন পরিচালককে আসামি করে মামলা করেন।