মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে বাড়ছে সবজির দাম: ভোক্তা অধিকারের প্রতিবেদন
কৃষকের উৎপাদিত সবজি খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছাতে পাঁচ থেকে ছয়টি হাতবদল হচ্ছে। আর এ কারণে ভোক্তাদেরও সবজি কিনতে হচ্ছে চড়া দামে।
সম্প্রতি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
গতকাল সোমবার (১১ মার্চ) রাতে ভোক্তা অধিদপ্তর সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একটি দল রাজধানীর কারওয়ানবাজারে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের পর্যবেক্ষণে একদল মধ্যস্বত্বভোগীর হদিস মেলে, যাদের না আছে ব্যবসায়িক আইডেন্টিটি (পরিচিতি), না আছে আড়ত বা পণ্য রাখার স্থান। কিন্তু তারা হাতবদলের একটি পর্যায় হিসেবে কাজ করছেন এবং পণ্যের মূল্য বাড়াতে ভূমিকা রাখছেন।
অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, এই দলটি রাতের বেলা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে কাঁচা পণ্য যেমন, বেগুন, শসা ও লেবু খোলা রাস্তায় এবং কোনো আড়তের আংশিক জায়গায় বিক্রি করেন। কিন্তু তাদের কোনো ধরনের ট্রেড লাইসেন্স নেই।
আবার তারা যেসব পণ্য বিক্রি করছেন বা কোথায় থেকে কিনেছেন, সেটিরও কোনো রসিদ নেই। আবার আড়তদার বা পাইকারি বিক্রেতারা পণ্যের কোনো মূল্য তালিকাও প্রদর্শনের ধার ধারেন না।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বেগুন বিক্রেতা নরসিংদী থেকে ২৮ মণ বেগুন ৬০ টাকা কেজি দরে কিনে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। অথচ তার কোনো ট্রেড লাইসেন্স তো দূরে থাক, পণ্য কেনা-বেচার রসিদটিও নেই।
সেখান থেকে মাত্র ১৫-২০ গজ দূরে আরেক বিক্রেতা বেগুন বিক্রি করছেন ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে। তিনি আড়ত থেকে ৩৫-৩৮ টাকা দরে বেগুন কিনেছেন। তার কাছেও অবশ্য কোনো ব্যবসায়িক কাগজপত্র ছিল না।
আরেকজন পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে ৬০ টাকা দরে লেবু বিক্রি করছিলেন। কিন্তু তিনি কত টাকা করে লেবু কিনেছেন, সেটির কোনো প্রমাণ তার কাছে নেই। একই ধরনের অব্যবস্থাপনা পাওয়া গেছে শসার ক্ষেত্রেও।
ভোক্তা অধিদপ্তর বলছে, কারওয়ানবাজারে কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছু পাইকারি বিক্রেতার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যাদের কোনো ব্যবসায়িক আইডেন্টিটি পাওয়া যায়নি।
এসব অনিয়মের ব্যাখ্যা চেয়ে কারওয়ানবাজার কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী মালিক সমিতিকে শোকজ করেছেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান। এতে সমিতিকে একদিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত রবিবার (১০ মার্চ) মোহাম্মদপুর টাউনহল মার্কেটে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বাজারের অব্যবস্থাপনা রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
রোজার আগে আগে লেবু, শসা, বেগুণের দাম আকাশচুম্বী হওয়া একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে।