বেড়েছে দাম, ছোট হয়েছে আকার: রাজধানীর ইফতার বাজারে অস্থিরতা
আটা, চিনি, তেল, ডালসহ ইফতার সামগ্রী বানাতে যেসব উপাদান প্রয়োজন হয়, সেসবের দাম বাড়ায় এ বছর বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ইফতার। আর যেগুলোর দাম বাড়েনি, আগের দামেই রয়েছে– সেগুলো ছোট হয়েছে আকারে।
চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার, কারওয়ান বাজার ও ইস্কাটন এলাকা ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজানের দ্রব্যগামগ্রীসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, দোকানিদের প্রতিটি ইফতার আইটেমের দাম বাড়াতে হচ্ছে– নয়তো ছোট করতে হচ্ছে আকারে।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ইফতারের আগে দোকান সাজানোর সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আমির হোসেন বলেন, "সবকিছুর দামই বেশি। আমাদের জিনিসপত্রের দাম বেশি দিতে হচ্ছে; কিন্তু আমি শঙ্কিত অনেকেই হয়তো এত দাম দিয়ে জিনিস কিনতে পারবে না। তাই এ বছর বিক্রি কম হতে পারে।"
পুরান ঢাকার চকবাজারের অন্যান্য ইফতার বিক্রেতারাও একই শঙ্কার কথা জানান।
আব্দুর রহমান নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, "প্রতি পিস ৫ টাকা দাম রেখেও আমরা চপের সাইজ ছোট করেছি। তারপরেও লাভ হবে কি-না তা নিশ্চিত নয়।"
অন্যান্য ইফতার সামগ্রী যেমন 'শাহী পরটা' এর দাম গত বছরের ৬০ টাকা থেকে বেড়ে এ বছর ৮০ টাকা হয়েছে। পাকোড়ার দাম ১০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।
শুধু ভাজাপোড়ার দামই বাড়েনি, বেড়েছে দুগ্ধ ও মিষ্টিজাত পণ্যের দামও। এসব খাদ্যপণ্যের দাম প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
পনির বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১,০০০ টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় ১০০ টাকা বেশি। আর পেস্তার শরবত এখন প্রতি লিটার ২০০-৩০০ টাকা, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১৫০-২৫০ টাকায়।
মাংসজাত পণ্যের দামও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বিক্রেতা ফজলুর রহমান গরুর মাংস ও মাটন কাবাবের দাম বাড়ার কথা জানান।
নির্দিষ্ট ধরনের গরুর মাংস ও মাটন কাবাবের দাম ২০০ টাকা বেড়ে এখন সেগুলো বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১,০০০ ও ১,৪০০ টাকায়।
"আমরা দাম বাড়ানোর পরিবর্তে চিকেন ডিশের পরিমাণ কমানোর বিষয়ে ভাবছি। আশা করি, মুরগির দাম কমে আসবে," বলেন ফজলুর রহমান।
সবকিছুর এমন দাম বৃদ্ধিতে ঢাকায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলো খাবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ কামাল বলেন, "দামি কাবাব আমার মতো আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ইফতারে বৈচিত্র্য একটি ঐতিহ্যবাহী ব্যাপার। কিন্তু দাম বাড়ার কারণে এই বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।"
যদিও এতসব দাম বৃদ্ধির মধ্যেও এক ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেল। পুরান ঢাকার এক ঐতিহ্যবাহী খাবার 'বড় বাপের পোলায় খায়' প্রতি কেজি এখন পর্যন্ত ৮০০ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতা মোহাম্মদ সাব্বির বলেন, "কম মুনাফা মেনে নিয়ে আমরা গত বছরের দামেই বিক্রি করছি। কারণ দাম বাড়ালে ক্রেতাদের নিরুৎসাহিত হবেন।"
মোহাম্মদ তানভীর নামের একজন ক্রেতা, "দাম না বাড়িয়ে বিক্রি ঠিক রাখতে হলে তাদের কৌশলী হতে হবে। এটি জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খাবার, ফলে আমরা এটি ইফতার আইটেমে রাখতে চাই।"
কারওয়ান বাজার ও ইস্কাটন এলকা ঘুরে দেখা যায়– পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোটা পাকোড়া প্রতি পিস ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যা গত বছরও বিক্রি হয়েছে একই দামে। তবে এবার আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে।
এক রেস্টুরেন্টের বিক্রিতা মোহম্মদ জামিল উদ্দিন বলেন, "ইফতার বানাতে গতবারের তুলনায় যে খরচ হয়েছে, সে তুলনায় আমরা দাম বাড়াতে পারিনি। তাই আকারে কিছুটা ছোট করেছি।"
এছাড়া তেল, গ্যাসসহ অন্যান্য সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমের চপ, আলুর চপ, হালিমের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে।
মোহম্মদ জামিল উদ্দিন বলেন, জিলাপি গত বছর ১৪০ কেজি বিক্রি করেছি; এবার ২০০ টাকা করছি।
ইফতার কিনতে আসা ফারুখ হোসেন বলেন, "সবকিছুর দাম বাড়তি। গতবার যেসব কিনতাম এবারও সেসব কিনছি। কিন্তু এবার হয় দাম বেশি, নয়তো সাইজে ছোট।"
এদিকে, ঢাকার জনপ্রিয় পাঁচতারকা হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিয়ে এসেছে ইফতারের বিশেষ আয়োজন। তাদের বিশেষ ইফতার প্যাকেজ বিক্রি হচ্ছে ১,৭০০ টাকায়; আর বুফে ইফতার ৬,৫০০ টাকা।