বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটির বিদ্যুৎ বিভ্রাট: মেরামতে কত সময় লাগে!
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটির ব্লক নম্বর ৬-এ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এমতাবস্থায় পার্কটির অন্তত দুটি ফার্ম জানায়, বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে ও জ্বালানির চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে।
জানা যায়, হাই-টেক সিটির বিদ্যুৎ সরবরাহকারী একটি সাবস্টেশনে আগুন লেগে যাওয়ায় ৭ মার্চ থেকে ব্লকটি বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল। গত মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়।
কর্মকর্তারা জানান, পার্কটিতে বিনিয়োগের সময় অত্যাধুনিক অবকাঠামোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানে একটি ব্লকের বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার করতেই কর্তৃপক্ষের ১৩ দিন সময় লেগেছে।
অন্যদিকে পার্কটির বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা সাবস্টেশনে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাদের দাবি, তারা এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এটি মেরামত করা হয়েছে।
হাইটেক সিটির উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসান ইবনে শাহী গত মঙ্গলবার জানান, গত বুধবার বিদ্যুতের সাব স্টেশনের ভিতর আগুন লাগে। তারপর সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সাব স্টেশনের ত্রুটি মেরামতের পর আজ মঙ্গলবার বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়েছে। ফলে ঐ প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কাজও চালু হয়েছে।
হাই টেক পার্কের ব্লক ৬ এ বর্তমানে তিনটি কোম্পানি উৎপাদন করছে। এগুলোর মধ্যে উৎপাদন পর্যায়ে রয়েছে দেশীয় গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফেয়ার টেকনোলজি ও অপটিক্যাল ফাইবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন ফাইবার। অপরদিকে, ড্যাফোডিল কোম্পানি কাজ চালুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফেয়ার টেকনোলজির এক কর্মকর্তা জানান, গত ৭ মার্চ থেকে এখনো পর্যন্ত সাব-স্টেশনটি অকার্যকর অবস্থায় থাকায় হুন্দাই কারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। যার কারণে কোম্পানিটির নিজস্ব ডিজেল জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কারখানা পরিচালনায় অধিক ব্যয় বহন করতে হয়েছিল। এতে করে প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদনে অতিরিক্ত ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ভার বহন করতে হয়েছে।
অন্যদিকে অপটিক্যাল ফাইবার নির্মাতা কোম্পানি গোল্ডেন ইন্টারন্যাশনালের একজন নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, "প্ল্যান্ট জেনারেটর পর্যাপ্ত ব্যাক-আপ দিতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাতের কারণে আমাদের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে।"
হাইটেক সিটির উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসান ইবনে শাহী জানান, হাইটেক সিটি এখনো আমরা ঠিকাদারদের কাছ থেকে পুরোপুরি বুঝে নেইনি। পার্কের ৬ নম্বর ব্লকের বিদ্যুৎ সরবরাহের স্টেশনে গোলযোগের কারণে ওই ব্লকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
পার্কটিতে ভবিষ্যতে এ ধরনের বিঘ্ন এড়াতে রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে জানান দায়িত্বে থাকা বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা।
এই বিভ্রাট বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটির অভ্যন্তরে অবকাঠামোগত স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে। কেননা এটি এমন একটি প্রকল্প যা দেশী ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে, আমদানি কমাতে এবং প্রযুক্তি খাতে রপ্তানির সুযোগ তৈরি করতে নির্মাণ করা হয়েছে।
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাই টেক পার্কটি ৩৫৫ একরের; যা দেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ। এই হাই-টেক পার্ক হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার খাতসহ ফরওয়ার্ড-ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ এ দেশি বিদেশি বিনিয়োগ আনার মাধ্যমে আমদানি হ্রাস ও রপ্তানির সুযোগ তৈরি করবে বলে আশা করা হয়। এতে দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রায় ৭০ হাজারেরও অধিক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হয় কর্মপরিকল্পনায়।
এদিকে হাই-টেক সিটির ওয়েবসাইট অনুসারে, পার্কটিতে মোট ছয়টি ব্লকে ৭৯টি সংস্থা ১.২৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। যার মধ্যে ৪১৯ মিলিয়ন বিদেশি বিনিয়োগ। এখন পর্যন্ত ৭৫টি কোম্পানি পার্কে বিনিয়োগ করেছে ও ৫ হাজার বেশি লোক চাকরি করছে।