এখনও চড়া মাংসের দাম, বাড়ছে আলুর দরও
চাহিদা কমে যাওয়ার পরও রোজার মাস থেকেই চড়া দামে বিক্রি হওয়া মাছ-মাংসের দর এখনও কমেনি। এর মধ্যেই নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে আলুর দাম। একইসঙ্গে, উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন তেলের দামও লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ডিম ও পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল। তবে সরবরাহ ঘাটতির কারণে কিছু সবজিও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে।
জানা যায়, রোজার ঈদের আগে গরুর মাংসের দাম ৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৮০-৮০০ টাকায় উঠে যায়। অবশ্য চট্টগ্রামে বিক্রি হচ্ছে ৯০০-১,০০০ টাকায়। কিন্তু ঈদের উৎসব শেষ হওয়ার পরও ঢাকার বাজারে ৭৮০ টাকার নিচে গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে না। একই অবস্থা ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির ক্ষেত্রেও।
বাড়তি চাহিদার অজুহাতে অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেওয়ায় ব্রয়লার মুরগির দাম উঠে যায় ২৫০ টাকায়, যা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে এখনও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩৫-২৪০ টাকায়। তবে কারওয়ানবাজারের মত বড় বাজারে বড় সাইজের ব্রয়লার মুরগি অবশ্য ২১৫-২২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
শুধু ব্রয়লারই নয়, এখনও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি। রোজার মধ্যে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৩৪০ টাকায়, যা ঈদের আগে ৩৬০-৩৮০ টাকায় উঠেছিল। এখন অবশ্য ৩৪০-৩৫০ টাকায় নেমে এসেছে।
কারওয়ানবাজারের মুরগি বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম জানান, ঈদের সময় ঢাকার বাইরে বাড়তি চাহিদা থাকায়, ঢাকায় সরবরাহ কমে যায়। যে কারণে দাম একটু বেড়ে যায়। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে ব্রয়লার মুরগির দাম দ্রুত কমবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিম ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে।
একইভাবে কমেনি মাছের দামও। রুই মাছ ৩৮০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০-২৫০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০-২৩০ টাকা, পাবদা ৪৫০-৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ঢাকার পাড়া মহল্লার মুদি দোকানগুলো এখনো পুরোপুরি খোলেনি। সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহও কিছুটা কম। যে কারণে কিছু কিছু সবজিও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাড়ছে আলুর দাম
এ অবস্থার মধ্যেই নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে আলুর দাম। ঈদের আগে যে আলু ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেটি এখন ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। আর ঢাকার বাইরে দাম ৬০ টাকায় উঠেছে।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, "এবারে আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে এবং কৃষক পর্যায়েই আলুর দাম বাড়তি। কোল্ড স্টোরেজে প্রতি বছর যেখানে ১১-১২ টাকায় আলু রাখা হয়, সেটি এবার ৩০ টাকায় উঠেছে।"
লিটারে ১০ টাকা বাড়তে পারে সয়াবিন তেলের দাম
সয়াবিন তেল বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল)।
এই দাম বাড়লে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল হবে ১৭৩ টাকা। তাদের দাবি, গত ৭ ফেব্রুয়ারি এনবিআর সয়াবিন তেলের কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করে। এর মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা আগের দামে ফিরতে চান।
যদিও সেদিনই বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "ভোজ্যতেলের দাম কোনোমতেই আগের দামে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ট্যারিফ কমিশন অ্যানালাইসিস করে, তবেই দাম কত হবে সেটি ঠিক করবে।"
এদিকে, গত ১৫ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ২৯টি পণ্যের দাম ঠিক করে দেয়। নির্ধারিত এই দাম কার্যকর করা সম্ভব নয় বলে রোজার মাসেই জানিয়েছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, সেটা হয়ওনি।
২৯টি পণ্যের মধ্যে মাত্র ৩টি পণ্য নির্ধারিত দামের কমে পাওয়া যাচ্ছে।
চট্টগাম নগরীর জামালখান এলাকার জান্নাত সুপার স্টোরের স্বত্বাধিকারী নুরুল আবছার বলেন, রমজানের শেষ সপ্তাহে পাইকারি পর্য়ায়ে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেড়েছে। এতে খুচরা পর্যায়েও পণ্যটির দাম আরও এক দফা বেড়ে গেছে।
এই ব্যবসায়ী বলেন, "দাম নির্ধারণের বিষয়ে আমরা শুনেছি। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি না হলে খুচরায় আমরা কীভাবে বিক্রি করবো?"
খাতুনগঞ্জের কাঁচাপণ্য (পেঁয়াজ, রসুন, আদা) ব্যবসায়ী সমিতি-হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিচ বলেন, "আমরাও চাই– প্রতিটি পর্যায়ে পণ্যের দাম নির্ধারিত থাকুক। এর জন্য মনিটরিং দরকার।"
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সব পর্যায়ে দাম নির্ধারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কিন্তু গত একমাসে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।