বন্ধ হচ্ছে লন্ডনের ৮৫০ বছরের পুরোনো মাছ-মাংসের বাজার
লন্ডনের ৮৫০ বছরের পুরোনো স্মিথফিল্ড মাংসের বাজার এবং বিলিংসগেট মাছের বাজার স্থায়ীভাবে বন্ধ হতে চলেছে। সিটি অব লন্ডন করপোরেশন ২০২৮ সালের পর বাজারগুলোর কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর বিবিসি'র।
করপোরেশন জানিয়েছে, ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থা করতে সহায়তা করা হবে।
ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তারা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত লন্ডনের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করবে।
একজন ব্যবসায়ী বলেছেন, 'এখন সবকিছুই হয় টাকার জন্য।'
স্মিথফিল্ড যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি মাংসের বাজার। ১৮৬০ সাল থেকে এখানে মাংস কেনা-বেচা হচ্ছে। এর আগে এটি মধ্যযুগীয় সময় থেকে একটি পশুর হাট ছিল।
এই স্থানে ইতোমধ্যে একটি নতুন সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছে, যেখানে নতুন লন্ডন মিউজিয়ামও থাকবে।
বিলিংসগেট যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় মাছের বাজার। প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার টন মাছ ও মাছজাত পণ্য এখানে বিক্রি হয়। ১৩২৭ সালে লোয়ার টেমস স্ট্রিটে এই বাজারের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮২ সালে এটি পপলার, পূর্ব লন্ডনে স্থানান্তরিত হয়।
বাজারটি ফিশমঙ্গার, ফিশ-অ্যান্ড-চিপ দোকান, ডেলিকেটেসেন এবং রেস্টুরেন্টের মতো ব্যবসাগুলোতে মাছ সরবরাহ করে থাকে। এই স্থানে এখন আবাসন প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সিটি অব লন্ডন করপোরেশন প্রথমে স্মিথফিল্ড, বিলিংসগেট এবং নিউ স্পিটালফিল্ড বাজারকে ডেগেনহামে নির্মিত একটি বিশেষায়িত স্থানে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছিল, যার আনুমানিক ব্যয় ছিল ১ বিলিয়ন পাউন্ড। তবে, ব্যয়ের উদ্বেগের কারণে চলতি মাসে সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। ডেগেনহামের জায়গাটি কিনতে এবং প্রস্তুত করতে ইতোমধ্যে ৩০৮ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়েছে।
করপোরেশনের কোর্ট অব কমন কাউন্সিল বাজার বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেয়।এখন করপোরেশনকে বাজার পরিচালনার দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে পার্লামেন্টে একটি প্রাইভেট বিল জমা দিতে হবে।
করপোরেশন জানিয়েছে, বাজারগুলো অন্তত ২০২৮ সাল পর্যন্ত চালু থাকবে এবং ব্যবসায়ীরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন।
বাজার বন্ধের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ। তাদের মতে, এটি শুধু একটি ব্যবসার সমাপ্তি নয়, লন্ডনের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য হারানোর শামিল।
সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে বিবিসি লন্ডনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক ব্যবসায়ী বলেন যে তিনি ক্ষতিপূরণ ছাড়াই স্থান ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
৭০ বছর ধরে তার পরিবার এই বাজারে মাছ বিক্রি করেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'স্থান ছাড়ার জন্য যেটুকু ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে নতুন করে কোথাও ব্যবসা শুরু করা সম্ভব নয়। আমাকে বলা হয়েছে, যা আছে তাই দিয়ে চালিয়ে যেতে। কিন্তু এটি মোটেই সহজ কিছু নয়।'
বাজার বন্ধ হলে এর প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, 'লন্ডনে আর কোনো মাছের বাজার থাকবে না। মানুষ স্থানীয় মাছ বিক্রেতাদের উপর নির্ভর করতে বাধ্য হবে, যদিও এটি কোনো দুর্ভাগ্যজনক বিষয় নয়। তবে মাছ বিক্রেতারা তাদের মাছ কোথায় পাবেন?'
তিনি আরও যোগ করেন, 'লন্ডনে কোনো মাছ সরবরাহকারী থাকবে না, তাই নতুন একটি মাছ বাজার থাকা খুবই প্রয়োজন। তবে কবে এবং কীভাবে এটি সম্ভব হবে, তা বলা মুশকিল।'
আরেক ব্যবসায়ী জানান, বাজার ধ্বংস হওয়ার শুরু হয়েছিল যখন মাছ পরিবহনকারীদের লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হয়।
'এখানে তরুণ কর্মীদের জন্য বিষয়টি খুবই খারাপ। কারণ, শ্রমিকদের কথা কেউ ভাবছে না। শুধুই কোম্পানির দিকেই সবার মনোযোগ,' বলেন তিনি।
ব্রেক্সিট ও মহামারির প্রভাবেও বাজারের অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, 'এখন সবকিছুই যেন প্যাকেটজাত হয়ে আসার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।'
তবে সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, বাজার বন্ধ করে ব্যবসায়ীদের নিজেদের মতো করে নতুন স্থানে কাজ শুরু করতে সহায়তা করা হবে। এছাড়াও, ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা এবং নতুন স্থানে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।
এই সিদ্ধান্তে লন্ডনের ঐতিহ্যের একটি অধ্যায় শেষ হলেও করপোরেশন একে ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখছে।