সরকারি পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ব্রুনাইয়ে কর্মী পাঠানো শুরু করছে বাংলাদেশ
সরকারি পর্যায়ে চুক্তির (জিটুজি) ভিত্তিতে ব্রুনাইতে বাংলাদেশি কর্মীদের আনুষ্ঠানিক অভিবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ প্রায় ৫০ জন কর্মীর প্রথম ব্যাচ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে যেতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) চুক্তির মাধ্যমে ব্রুনাইতে কর্মী পাঠাচ্ছে। আগে এ কাজ করত বেসরকারি সংস্থাগুলো।
বোয়েসেল কর্মকর্তারা জানান, ৪৪ হাজার থেকে ৫৬ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচে গত ১ মার্চ থেকে অভিবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ব্রুনাই এখন রাজমিস্ত্রি, ঘর পেইন্টিং, ছুতারের কাজ, নির্মাণকাজ, শেফ ও ওয়েটারের পাশাপাশি রান্নার কাজে সহায়তার জন্য দক্ষ ও স্বল্প দক্ষ উভয় ধরনের কর্মী নিচ্ছে।
বোয়েসেলের মহাব্যবস্থাপক এবিএম আবদুল হালিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ব্রুনাইয়ের নিয়োগকর্তারা সরাসরি কর্মী নিয়োগ না দিয়ে সেদেশের এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে কাজ করে থাকেন। ব্রুনাইয়ের এরকম ৩৬টি এজেন্সির সঙ্গে বোয়েসেল সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে ১০টার মতো এজেন্সি কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
'চলতি মাসের শেষের দিকে বা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৫০ জনের প্রথম ব্যাচ দেশটিতে পাড়ি জমাবে। এখন পর্যন্ত চাহিদা সীমিত হলেও আমরা আশা করছি যে সামনের মাসগুলোতে নিয়মিত ভিত্তিতে সেখানে কর্মী যাবে।'
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুসারে, ১৯৯২ সাল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ব্রুনাই ৭৭ হাজার ৯৫৮ জন বাংলাদেশি কর্মী নিয়েছে।
কোভিড মহামারির আগে ব্রুনাইয়ে প্রতি বছর গড়ে ৫ হাজার বাংলাদেশি যেতেন। কিন্তু ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটি মাত্র ৩ হাজার ৪৭৩ জন বাংলাদেশি কর্মী নিয়েছে।
আনঅফিশিয়াল হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ব্রুনাইতে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নির্মাণ, পরিচ্ছন্নতা, রেস্তোরাঁ এবং তেল ও গ্যাসসহ বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন।
মানব পাচারকারী ও অবৈধ মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণের ফলে এই অভিবাসী শ্রমিকদের অনেককেই কারাভোগ ও আর্থিক জরিমানাসহ শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২২-এর অক্টোবরে ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতানের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী এবং ব্রুনাইয়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
আশা করা হচ্ছে, নতুন চালু করা এ প্রক্রিয়া যেকোনো ধরনের প্রতারণা এবং মানব পাচার প্রতিরোধে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত খরচে বাংলাদেশ থেকে ব্রুনাইতে কর্মী নিয়োগে কার্যকর হবে।
ব্রুনাইয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার ওয়েলফেয়ার উইংয়ের ফার্স্ট সেক্রেটারি (লেবার) আবু বক্কর সিদ্দিক টিবিএসকে বলেন, '২০২২ সালের এমওইউ অনুযায়ী এখন শুধু বোয়েসেল কর্মী পাঠাতে পারবে, বেসরকারি এজেন্সিগুলো নয়।'
তিনি বলেন, 'ব্রুনাই ছোট দেশ, তবে সেখানে নিয়মিত ভিত্তিতে অল্প হলেও কিছুসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ পান। ব্রুনাইতে আমরা চেষ্টা করি যাতে কর্মীরা অন্তত ৬০০ ব্রুনাই ডলার (৫০ হাজার টাকা) বেতন পান, যা মধ্যপ্রাচ্য কিংবা মালয়েশিয়ার তুলনায় বেশি।'
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অভ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, 'ব্রুনাই বাংলাদেশিদের জন্য দীর্ঘদিনের শ্রমবাজার। ১৯৯২ সাল থেকে আমাদের কর্মীরা যান দেশটিতে। দেশটির শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের মতো বিস্তৃত না হলেও, ব্রুনাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশটিতে যাওয়া কর্মীরা সিঙ্গাপুরে যাওয়া কর্মীদের মতোই উপার্জন করতে পারেন।'
তবে বেসরকারি এজেন্সিগুলো দেশটিতে কর্মী পাঠানোর সুযোগ হারানোয় তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
চড়া উচ্চ অভিবাসন ব্যয় আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে শামীম চৌধুরী নোমান বলেন, কর্তৃপক্ষের উচিত বেশি টাকা নেওয়া এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া।
'কিন্তু আড়াই হাজার নিবন্ধিত এজেন্সিকে শাস্তি দেওয়াটা অন্যায়,' বলেন তিনি।