তীব্র তাপদাহ: ঘাম, প্রখর রোদ উপেক্ষা করেও ফসলের মাঠে কৃষকরা
'গরম আমাদের কাছে কোনো বিষয় না। বিষয় হচ্ছে ফসল ঘরে নিতে হবে।'
শনিবার (২০ এপ্রিল) কথাগুলো বলছিলেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর বংশী ইউনিয়নের টুনুর চর এলাকার কৃষক নুরুল হক (৬০)।
ঘড়িতে তখন সময় দুপুর প্রায় ১২টা। তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়ে ফসলি মাঠে খালি মাথায় দাঁড়ানো ছিল প্রায় অসম্ভব। অথচ সেই রোদে জমিতে সয়াবিন কাটছিলেন ১৫ জন কৃষক। তাদের সবার শরীর থেকে তখন ঝরছিল ঘাম। প্রচণ্ড গরমে শরীরে ক্লান্তি থাকলেও তাদের মুখে ছিল হাসি। তারা গান গেয়ে গেয়ে সয়াবিন কাটছিলেন।
গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থেকে আজ রবিবার (২১ এপ্রিল) পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলার কয়েকটি ফসলি মাঠ ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
নুরুল হক বলেন, 'মাঠে সয়াবিন পেকে গেছে। এখন দ্রুত ফসল তোলা জরুরি। ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলেও সয়াবিন তুলতে হবে। কারণ দেরি হলে কালবৈশাখী ঝড় ও পরে বৃষ্টি। তাতে আমরা শেষ হয়ে যাব।'
কয়েক দিন ধরে সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তীব্র গরমে হাসফাঁস করছে মানুষ। সন্ধ্যার পরও মিলছে না স্বস্তি। এ অবস্থার মধ্যেও থেমে নেই কৃষকের কাজ। তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে তারা ফসল ফলানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে গরমের কারণে অবশ্য কেউ কেউ জমিতে কাজের সময় পরিবর্তন করেছেন।
কৃষকরা জানান, তাপ হোক আর বৃষ্টি, সময়মতো প্রয়োজনীয় কাজ না করলে ঘরে ফসল উঠবে না।
আবুল কাশেম (৫৫) নামের আরেক কৃষক জানান, গরমের কারণে তারা কাজের সময় পরিবর্তন করেছেন। তারা এক সপ্তাহ আগে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করতেন দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে। প্রতি দেড় ঘণ্টা পর পর ১০ মিনিট হালকা বিশ্রাম নিতেন। এখন একই পারিশ্রমিকে ভোর ৬টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত অনেকেই কাজ করছেন।
আবার কেউ কেউ সারাদিন কাজ করতেন ৬০০ টাকা মজুরিতে। এখন সময় পরিবর্তন করে ১১টা পর্যন্ত কাজ করছেন। কেউ আবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করছেন।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর মনসা গ্রামে টমেটো ক্ষেত পরিষ্কার করছিলেন ইসমাইল (৪৫)।
তিনি জানান, এখন ক্ষেতে আসার সময় প্রচুর পানি সঙ্গে আনেন। গরমে হলেও এখন পর্যন্ত কোনোদিন কাজ বন্ধ করেননি।
আলেয়া বেগম (৪৩) নামে এক কৃষাণী বলেন, 'খুব ছোটবেলা থেকেই আমরা মাঠে-ঘাঁটে কাজ করে রোদ, বৃষ্টির সাথে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছি। আমাদের গরম লাগে না।'
কৃষকরা জানান, এপ্রিল থেকে মে মাসের মাঝামাঝিতে লক্ষ্মীপুর জেলাজুড়ে বিভিন্ন ফসলি মাঠে সয়াবিন, বাদাম, সূর্যমুখী, বিভিন্ন সবজি ও বোরো ধান আসে। এ সময় কৃষকরা খুবই ব্যস্ত সময় পার করেন। তাপ, বৃষ্টি, ঝড় কিছুই কৃষকদের আটকাতে পারে না। কিন্তু এই গরমের মধ্যে কাজ করতে তাদের খুবই কষ্ট হয়।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি আবহাওয়া সেন্টারের পর্যবেক্ষক মো. সোহরাব হোসেন জানান, দুই-তিন দিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা গড়ে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জানান, রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৃষকরা ক্ষেত-খামারে কাজ করছেন। তবে এ সময় মালিকদের কৃষি শ্রমিকদের ঠাণ্ডা পানি ও স্যালাইন দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।