তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গায় পানি সংকট পরিস্থিতির অবনতি
তীব্র তাপপ্রবাহে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় চুয়াডাঙ্গায় পানি সংকট পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলায় নলকূপ ও ইলেকট্রিক মোটরে পানি ওঠার পরিমাণ কমে গেছে একেবারেই।
অনেক নলকূপ ও ইলেকট্রিক মোটরে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানযোগ্য পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানি পেতে ইলেকট্রিক মোটর নামানো হচ্ছে মাটির ১০ থেকে ১২ফুট গভীরে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা এলাকায় প্রতিদিনই নিচের দিকে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সরকারি সাড়ে পাঁচ হাজারসহ ব্যাক্তি মালিকানা মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার নলকূপ রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশি নলকূপেই উঠছে না পানি।
দামুড়হুদা উপজেলা সদরের দশমী পাড়ার আবু হাসনাত বলেন, "আগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট মোটর চালালেই বাড়ির ছাদে এক হাজার লিটার পানির ট্যাংক পূর্ণ হয়ে যেত। প্রায় মাস দেড়েক আগে থেকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা মোটর চালালেও প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না।"
"একই ভাবে টিউবওয়েলের পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য পানি উঠলেও কল চাপতে অনেক শক্তি ব্যয় করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে বৈদ্যুতিক মোটর। ইতোমধ্যে আমার একটি মোটর পুড়ে গেছে," যোগ করেন তিনি।
দুইদিন আগে ১২ ফিট গর্তখুড়ে ১২টি রিং বসিয়ে মোটর গভীরে নামানোর পর এখন পানির সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে জানান হাসনাত।
দামুড়হুদা উপজেলা সদর, সদাবরী, মদনা, দর্শনা, নতিপোতা, হাউলি, কুড়ুলগাছি, কার্পাসডাঙ্গা, কুতুবপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি নলকূপে একেবারেই পানি উঠছে না। বাকি নলকূপগুলোতে পানি উঠলেও তা সামান্য পরিমাণে। নলকূপ দিয়ে পানি কম ওঠায় অনেকেই স্থান পরিবর্তন করে নতুন করে নলকূপ বসিয়েছেন। এরপরেও ফলাফল একই।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই রান্না ও কাপড় ধোয়ার জন্য ব্যবহার করছেন এক সময়কার অব্যবহৃত কূপ বা ইন্দারার পানি।
অনেকেই আবার বাড়তি টাকা খরচ করে মাটির গভীরে নতুন করে নলকূপ বসাচ্ছেন।
দামুড়হুদার উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ্বাস জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই টিউবয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য কিছু টিউবয়েলে পানি উঠলেও পরিমাণে তা খুবই কম। বাধ্য হয়ে প্রায় বাড়িতে বৈদ্যুতিক মোটর ৮-১০ফিট নিচে নামিয়ে পানি তোলা হচ্ছে।
"যাদের মোটরের ব্যবস্থা নেই বা সামর্থ নেই তারা অন্যের বাড়ি থেকে পানি এনে পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন। এই মুহূর্তে কিছু টিউবয়েলে পানি উঠলেও তাপপ্রবাহ চলমান থাকলে, আর কিছুদিনের মধ্যে সেসব টিউবয়েলে পানি ওঠাও বন্ধ হয়ে যাবে," বলেন তিনি।
দামুড়হুদা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, "প্রতিবছর ৬ থেকে ৮ ফুট নিচে নামছে পানির স্তর। বছর দশেক আগে এই এলাকায় ৪০ থেকে ৬০ ফুটের মধ্যে ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমেও ১০০ থেকে ১৪০ ফুটের মধ্যে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না।"
অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা এবং যত্রতত্র পুকুর-খাল-বিল ভরাট করে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সামনে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।