পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ময়মনসিংহে দেশের একমাত্র কোল্ড স্টোরেজ চালু করল জায়ান্ট এগ্রো লিমিটেড
ফসল-সংগ্রহ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির (পোস্ট-হারভেস্ট লস) জন্য চাহিদার দেশে বেশি উৎপাদন করেও প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দেয়। প্রতি বছর পেঁয়াজে ২০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ পোস্ট-হারভেস্ট লস হয়। এ সমস্যার সমাধানে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করেছে জায়ান্ট জায়ান্ট এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড। এ হিমাগারে প্রাথমিকভাবে ৪০০ টন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে।
কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুস শহীদ বৃহস্পতিবার (২ মে) কোল্ড স্টোরেজটি উদ্বোধন করেন। এটিই পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য দেশের একমাত্র হিমাগার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডাচ সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশে পেঁয়াজের সরবরাহ চেইন উন্নত করার লক্ষ্যে 'অনিয়ন ইমপ্যাক্ট ক্লাস্টার' প্রকল্পের অংশ হিসেবে হিমাগারটি গড়ে তোলা হয়েছে। এ হিমাগারে ৭-৮ মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে।
হিমাগারটিতে অটোমেটেড মেশিনে আকার অনুযায়ী পেঁয়াজ বাছাই করে কাঠের বাক্সে ভরে তা হিমাগারে রাখা হবে। হিমাগারের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও অন্যান্য ফ্যাক্টর নেদারল্যান্ডস সরকারের দেওয়া প্রযুক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ বলেন, 'বর্তমানে আমাদের বার্ষিক পেঁয়াজ উৎপাদন প্রায় ৩৫ লাখ টন এবং চাহিদা প্রায় ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। অথচ বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজের ঘাটতি এবং মূল্যের ওঠানামার সমস্যায় জর্জরিত—যা প্রায়শই আমাদের নাগরিকদের জন্য যথেষ্ট কষ্টের কারণ হয়।'
মন্ত্রী আরও বলেন, উদ্বৃত্ত উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও অপর্যাপ্ত মজুত সুবিধা এবং সংরক্ষণাগারের অভাবে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। এতে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বেড়েছে এবং প্রচুর রাজনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছে।
ডাচ ও বাংলাদেশি কোম্পানির কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে স্থাপিত পেঁয়াজের হিমাগারটি দেশের পেঁয়াজ শিল্পের যাত্রায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে বলে মন্তব্য করেন কৃষিমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, এ অংশীদারত্বের লক্ষ্য বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদনশীলতা ও সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ডাচদের দক্ষতা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী সমাধানগুলোকে কাজে লাগানো।
জায়ান্ট এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজ এম হাসান বলেন, 'বেসরকারি খাত যখন বড় পরিসরে পেঁয়াজের হিমাগারে বিনিয়োগ করবে, তখন সহায়তা সহায়তা দরকার। এখন যেমন নেদারল্যান্ডসের অনক কোম্পানি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি দিতে চায়, টাকাটা পরে কিস্তিতে নেবে। এই নীতিতে আনুমতির জন্য সরকারের সহযোগিতা দরকার, যাতে করে বিনিয়োগ সহজ হয়।'
বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত ইরমা ভ্যান ডুরেন বলেন, 'আজ আমরা পেঁয়াজ স্টোরেজে একসঙ্গে কাজ করছি। সহযোগিতার আরও সুযোগ রয়েছে। পেঁয়াজ সংরক্ষণ প্রকল্প সহযোগিতার উদ্যোগ সবসময় অব্যাহত থাকবে।'
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, দেশে ৪০০টিরও বেশি হিমাগার রয়েছে, যা মূলত আলু সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এর আগে ২০০৪ সালে রাজশাহীর ফজলুর রহমান পেঁয়াজের কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করেন। প্রায় ১৫ কোটি ব্যয়ে তৈরি করা ৩ হাজার টন ধারণক্ষমতার ওই স্টোরেজটি পরপর দুইবছর লোকসান গোনার পর বন্ধ হয়ে যায়।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ২০২০ সাল থেকে পেঁয়াজের জন্য একটি কোল্ড স্টোরেজ তৈরির চেষ্টা করতে থাকলেও এখনও তা আলোর মুখ দেখেনি।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৩৫ লাখ টন, যা চাহিদার চেয়ে বেশি। কিন্তু ২০-৪০ শতাংশ পোস্ট-হার্ভেস্ট লসের কারণে ব্যবহারোপযোগী পেঁয়াজের সরবরাহ নেমে আসে ২৫ লাখ টনে।
ফলে প্রতি বছর আরও অন্তত ৫-৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হয়।
সময় কম লাগার কারণে আমদানির বেশিরভাগই ভারত থেকেই আসে, যে কারণে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি কখনও বন্ধ করলেই বাংলাদেশে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার রেকর্ডও রয়েছে।