উজ্জ্বল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা: ৮ বছরে ১৯টি বাঘের জন্ম
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এখন বাঘের সংখ্যা ১৯টি, যা দেশের চিড়িয়াখানাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এসব বাঘের কল্যাণে প্রাণীপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, উপযোগী পরিবেশ ও যত্নের সুবাদে গত আট বছরে এখানে বাঘের প্রজননের হার বেড়েছে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ১৯টি বাঘের বিপরীতে ঢাকা জাতীয় চিড়িয়াখানায় বাঘ রয়েছে ১৩টি, গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ সাফারি পার্কে ৮টি, ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ৪টি এবং রংপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ আছে মাত্র দুটি।
চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ড. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, 'চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা ২১টি হওয়ার কথা ছিল। তবে সেখান থেকে দুটি বাঘ দুটি জলহস্তির বিনিময়ে রংপুর চিড়িয়াখানাকে দেওয়া হয়েছে।'
১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০০৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় কোনো বাঘ ছিল না। ওই বছর চন্দ্র ও পূর্ণিমা নামে একজোড়া বাঘকে ঢাকা জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু বার্ধক্যজনিত কারণে কোনো শাবকের জন্ম না দিয়েই ২০০৬ সালে বাঘ চন্দ্র ও ২০১২ সালে বাঘিনী পূর্ণিমা মারা যায়।
তবে চার বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসা আরেক বাঘ দম্পতি রাজ ও পরী চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জন্য আশীর্বাদে পরিণত হয়। তারাই অধিকাংশ বাঘ শাবকের জন্ম দিয়ে দর্শনার্থীদের জন্য বড় আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
পর্যাপ্ত যত্ন ও উপযোগী পরিবেশে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই রাজ-পরী দম্পতির ঘরে প্রথম শাবক জন্ম নেয়। শাবকগুলোর মধ্যে 'শুভ্রা' ছিল বিরল সাদা বাঘ।
এর প্রায় দেড় বছর পর রাজ-পরীর ঘরে জন্ম নেয় তাদের মেয়ে 'করোনা'।
এর পরের বছর রাজের সঙ্গে জয়া নামে আরেকটি বাঘিনী রাখা হয়। এই দম্পতি ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর তাদের প্রথম পুরুষ শাবকের জন্ম দেয়। শাবকটির নাম রাখা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্টের নামানুসারে জো বাইডেন। কিন্তু মা জয়া শাবকটিকে ছেড়ে চলে যায়।
তবে চিড়িয়াখানার কর্মীরা অন্যান্য বাঘের সঙ্গে জো বাইডেনকে লালনপালন করেন।
২০২১ সালে মোট ছয়টি শাবক জন্ম নেওয়ার ফলে চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।
শাবকগুলোর মধ্যে ওই বছরের ৮ মে রাজ-পরী দম্পতির ঘরে তিনটি শাবক—দুটি পুরুষ ও একটি মেয়ে—জন্ম নেয়।
এছাড়া রাজ ও শুভ্রা দম্পতির ঘরে ২৬ আগস্ট টুনি নামে একটি মেয়ে শাবক জন্ম নেয়। আর রাজ ও জয়া দম্পতির ঘরে ১৯ সেপ্টেম্বর বকুল ও জবা নামে দুটি মেয়ে শাবক জন্ম নেয়।
২০২২ সালে একসঙ্গে চারটি সাদা বাঘের জন্মের ঘটনা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের জন্য বড় মাইলফলক। সাদা বাঘগুলোর মধ্যে তিনটি শাবক পুরুষ ও একটি মেয়ে ছিল।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, রাজ-পরী দম্পতির ঘরে জন্ম নেওয়া পদ্মা, মেঘনা, সাঙ্গু ও হালদা নামের এই বিরল সাদা বাঘগুলোর আকর্ষণে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী আসে।
২০২৩ সালে বিদ্যমান খাঁচাগুলোতে জায়গার ঘাটতি দেখা দেওয়ায় প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এই সমস্যার সমাধানে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিময় কর্মসূচি শুরু করেছে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এ বছর এখন পর্যন্ত ছয়টি শাবকের জন্ম হয়েছে, এর মধ্যে একটি শাবক মৃত ছিল।
এদের মধ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জো বাইডেন ও জয়া দম্পতির ঘরে তিনটি মেয়ে শাবক জন্ম নেয়। তাদের নাম রাখা হয় সম্রাজ্ঞী, তেজস্বিনী ও বিজয়িনী।
রাজ-পরী দম্পতি ওই বছরের ৯ এপ্রিল আরও তিনটি মেয়ে শাবকের জন্ম দেয়, তবে তাদের মধ্যে একটি শাবক মৃত অবস্থায় জন্ম নেয়।
বাঘের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় চিড়িয়াখানার সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করার জন্য দেশের অন্যান্য চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কের সঙ্গে আরও প্রাণী বিনিময় করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
১০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বর্তমানে সাদা বাঘ ও সিংহসহ ৬৫ প্রজাতির প্রায় ৬২০টি প্রাণী রয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার দর্শনার্থী আসে। টিকিট বিক্রি থেকে চিড়িয়াখানাটি বছরে ৫০ কোটি টাকা আয় করে।