চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট স্থাপন প্রকল্প আজ উঠছে একনেকের সভায়
প্রায় দুই দশকের নিরলস প্রচেষ্টার পর বাংলাদেশ ও চীন সরকারের অর্থায়নে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসিএইচ) একটি পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট স্থাপনের প্রকল্পটি শুরু হতে যাচ্ছে।
অনুমোদনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (৯ মে) প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজকের সভায় প্রকল্পটির অনুমোদনের ব্যাপারে আশাবাদী স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. সামন্ত লাল সেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ১৫০ বেডের বার্ন ইউনিটের জন্য ৬ তলা একটি ভবন করা হবে। এতে আইসিইউ, এইচডিইউসহ সব ধরনের সুবিধা থাকবে। ২৮৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী– এটি বাস্তবায়নে আনুমানিক ব্যয় হবে প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে চীন সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১১৮ মিলিয়ন ইউয়ান, যা বাংলাদেশি মুদ্রার অঙ্কে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা এবং বাকি ১০৫ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগের নয়টি জেলার প্রায় চার কোটি মানুষ সিএমসিএইচের বর্তমান ২৬ শয্যার বার্ন ইউনিটের ওপর নির্ভরশীল। যদিও ইউনিটটিতে নেই কোনো আইসিইউ ব্যবস্থা।
প্রতিদিন ৬০ জনেরও বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় ইউনিটের ওপর সব সময়ই চাপ থাকে। অনেক রোগী হাসপাতালের মেঝেতে ঘুমাতে বাধ্য হন।
এছাড়া, জরুরি বিভাগে ২৫-৩০ জন এবং আউটডোর সার্ভিসে ৩০-৪০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ইউনিটটি এখনও ১৯৫৭ সালে নির্মিত অপারেটিং থিয়েটার ব্যবহার করছে, যেখানে নেই কোনো আইসিইউ বেড, নেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা।
চিকিৎসকরা বলছেন, অগ্নি দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগীদের পরিচর্যার জন্য বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য। কারণ এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসায় প্রথম ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মৃত্যুহার কমাতে পারে বলে মনে করা হয়। তাই স্থানান্তরের সময় যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা দরকার।
চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট হলে চট্টগ্রাম বিভাগের আগ্নিকাণ্ডে আহত রোগীদের চিকিৎসার জন্য আর ঢাকায় আসতে হবেনা বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট স্থাপনের জন্য আমি গত ২০ বছর ধরে আমি চেষ্টা করছি। এখন আর চট্টগ্রামের বার্নের রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে হবেনা, এতে রোগীদের সুস্থ্য করতে গোল্ডেন আওয়ার কাজে লাগানো যাবে।"
তিনি বলেন, "ওখানে আইসিইউসহ সব ধরনের সুবিধা থাকবে। এতে রোগীদের ভোগান্তি কমবে, পাশাপাশি অনেক মানুষের জীবন বাঁচবে। বার্নের পাশাপাশি প্লাস্টিক সার্জারির ট্রিটমেন্ট হবে সেখানে।"
মন্ত্রী আরও বলেন, "এটি একটি অত্যন্ত ভালো প্রকল্প। এই প্রকল্পের সব কাগজপত্র আমি দেখেছি, যন্ত্রপাতি যা হবে, সব আমি জানি। জনবল সংকট হবে। জনবলের কাজ আমি শুরু করে দিয়েছি। বিল্ডিং হওয়ার আগে জনবল তৈরি থাকবে।"
চীন সরকারের সংশ্লিষ্টতা
ডিপিপি তথ্য মতে– প্রকল্পটি নির্মাণ, সরঞ্জামাদি স্থাপন এবং সমন্বয়ের জন্য চীনের পক্ষ থেকে প্রকল্পের নকশা, প্রয়োজনীয় নির্মাণ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে; প্রয়োজনীয় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ নিয়োগের বিষয়টিও তারা তদারকি করবে। একইসঙ্গে, তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং আসবাবপত্র সরবরাহ করবে।
প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর চীন সরকার এক বছরের জন্য প্রযুক্তি সহায়তা দেবে।
২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে চীন 'চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের উন্নয়ন' নামক প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা চালাতে সম্মত হয়।
সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর প্রকল্পের পরিকল্পনায় বেশ কিছু সংশোধন আসে। পরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
এদিকে সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও ফরিদপুরের ৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোড়া রোগীদের পরিচর্যার জন্য একটি পৃথক প্রকল্পও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ দগ্ধ হন, এরমধ্যে মারা যান প্রায় ৬,৭০০ জন। ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে অসুস্থতার তৃতীয় প্রধান কারণ আগুনে পোড়া। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩,৪০০ শিশু অগ্নিদগ্ধ হয়ে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যায়।