ঘূর্ণিঝড় রিমাল: ঢাকায় ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শঙ্কা
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে এরই মধ্যে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র উপকূলে আঘাত হানার পরে সোমবার এটি ঢাকার উপর দিয়ে অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। এসময় ঢাকায় ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কেন্দ্রটি মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশের উপর থাকতে পারে, এসময় পর্যন্ত একটানা ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) দেশের আট বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে।
বিএমডি'র ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, 'উপকূলীয় জেলাগুলোতে সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পরে দেশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে।'
তিনি বলেন, 'স্থলভাগে আঘাতের পরে ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে পরবে, তবে এরপরেও আরও দুইদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ঝরাবে। আগামীকাল ঢাকাতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।'
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, 'আবহাওয়ার প্রায় সব পূর্বাভাস মডেলেই সোমবার দিনভর ঢাকা শহরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এদিন মোট ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে।'
ঢাকার সিটি করপোরেশনগুলো অবশ্য বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কা করছে না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম টিবিএসকে বলেন, 'বৃষ্টি হলে যাতে ঢাকায় জলাবদ্ধতা না হয়, সেজন্য আমাদের ড্রেন ও খালগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। তারপরও যদি বৃষ্টির পরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তবে আমাদের কুইক রেসপন্স টিম আছে; তারা দ্রুত সেখানে গিয়ে সমস্যার সমাধান করবে।'
তিনি আরও বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সরাসরি ঢাকায় পড়বে না। এর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হতে পারে এবং তখন সমস্যা হলে তার সমাধান করা হবে। ঘূর্ণিঝড়ের জন্য আলাদা বিশেষ কোনো প্রস্তুতি আমাদের নেই।'
এদিকে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল সোমবার স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, তুষারঝড়ের পূর্বাভাসে কানাডায় স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখা হয়। কারণ এসময় প্রচুর পরিমাণে তুষারপাত হয় এবং শহরের বাসিন্দাদের জন্য এরমধ্যে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকায় এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে, তা অমূল্য সময় এবং অর্থ সাশ্রয় করতে পারে এবং মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতে সহায়তা করতে পারে।'
মোস্তফা কামাল পলাশ আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল অস্বাভাবিক ধীরগতিতে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র খুলনা, ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের উপর দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, আলিপুর দুয়ার, কুচবিহার জেলা ও মেঘালয় রাজ্যের উপর দিয়ে আসাম রাজ্যে প্রবেশের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। স্থলভাগে প্রবেশের পরে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্র যখন খুলনা ও ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে অতিক্রম করবে, তখনও বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।'
তিনি বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দেশের আট বিভাগেই ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।'
ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে খুলনা বিভাগ ৫০০-৬০০ মিলিমিটার, বরিশাল বিভাগ ৪০০-৫০০, ঢাকায় ২০০-৩৫০, চট্টগ্রামে ২০০-৩০০, রাজশাহীতে ২৫০-৩৫০, ময়মনিসংহে ৪০০-৫০০, সিলেটে ১৫০-২৫০, এবং রংপুর বিভাগ ২৫০-৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরে সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টির সামনের অংশ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং এসব জেলার কাছের দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।