ঈদযাত্রা শুরু: গাজীপুরে মহাসড়কে বাড়ছে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নাড়ীর টানে রাজধানী ঢাকা ও আশেপাশের এলাকা ছেড়ে নিজ এলাকায় ফিরছে মানুষ। শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপন করতে বাড়িমুখী নানান পেশার কর্মজীবীরা। ফলে মহাসড়কে ইতোমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ।
এদিকে ঈদযাত্রাকে স্বস্তিদায়ক, নির্বিঘ্ন করার জন্য যানজট নিরসনে গাজীপুর মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে।
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড়। এপথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করে মানুষ। ঈদুল আজহা উদযাপনে কর্মজীবী মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করায় সকাল থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রায় ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করে।
ঈদের সময় মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যানবাহন চলাচল করে। এতে মহাসড়কের কোথাও থেমে থেমে, আবার কোথাও দীর্ঘসময় ধরে যানজটের সৃষ্টি হয়। ঈদের ৩দিন বাকি থাকলেও শিল্পনগরী গাজীপুরে অনেক কারখানা বৃহস্পতিবার ছুটি হয়েছে। অনেকে যানজটের ভয়ে আগেই স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে এখনই পাঠিয়ে দিচ্ছেন। যার কারণে সকাল থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করে।
সিরাজগঞ্জ যাওয়ার জন্য চন্দ্রায় অপেক্ষা করছিলেন মিলন হোসেন। তিনি বলেন, 'সকাল ১১টা পর্যন্ত ডিউটি করে আমাদের কারখানা আজ (বৃহস্পতিবার) ১০ দিন ছুটি দিয়েছে। আগেই ব্যাগ গুছিয়ে রেখে এসেছিলাম, তাই ছুটির হওয়ার সাথে সাথে এখন রওনা হয়েছি। আরো কারখানা ছুটি হলে সড়কে মানুষের ভীড় বাড়বে।'
গাজীপুরের নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, 'ঈদযাত্রীরা গ্রামের বাড়িতে যাওয়া শুরু করেছে। এতে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেকটা বেড়েছে। মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করছেন। আজ থেকে যাত্রীর চাপ বেড়েছে, আগামী ২-৩ দিন তা বজায় থাকবে।'
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আলমগীর হোসেন বলেন, 'যানজট নিরসনে ৫০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। যানজট নিরসনের জন্য বিআরটি প্রকল্পের মাঝখানের লেনটি ময়মনসিংহগামী যানবাহনের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।'
গাজীপুরে পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, 'ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৪০০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। চন্দ্রা দিয়ে ১৬টি জেলার প্রায় ১১৭টি রুটের যানবাহন চলাচল করে। কাজের সূত্রে উত্তরবঙ্গের লাখো মানুষ গাজীপুর ও আশপাশের জেলায় বসবাস করে। ঈদের ছুটিতে এসব অঞ্চলের মানুষ প্রায় একই সময়ে কর্মস্থল ছেড়ে বাড়ির পথে রওনা হয়।'
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ঈদযাত্রার পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান। পরে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান বলেন, 'ঈদকে সামনে রেখে সরকার আমাদের বেশকিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সে আলোকে আমরা ঈদের এক মাস আগে থেকে গাজীপুর মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশসহ বিআরটিসি ও পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে একাধিকবার সভা করেছি। আমরা ঈদযাত্রা কিভাবে নির্বিঘ্ন করা যায়, সেসব বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।'
তিনি বলেন, ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে মহাসড়কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান চিহ্নিততকরণ, ওয়াচ-টাওয়ার নির্মাণ এবং মহাসড়কের পাশে পশুর হাট থাকলে যানজট যেন না হয়, এজন্য পুলিশ ও ইজারাদারের সঙ্গে কথা বলে হাটগুলো নিরাপদ দুরত্বে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঈদকে সামনে রেখে এবারও ব্যাপক নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকের বাইরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পুরোটা সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে এসেছি। এবার আমরা অত্যাধুনিক ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করছি। আশা করছি, এবারও ঈদ যাত্রা নিরাপদ হবে।'
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি (প্রশাসন) মাহফুজুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি শামসুল ইসলাম, অতিরিক্ত ডিআইজি বরকত উল্লা খান, পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা রানী সরকার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত), সহকারী পুলিশ সুপার (হাইওয়ে গাজীপুর সার্কেল) মোহাম্মদ শাহেদ আহমেদ চৌধুরীসহ অন্যরা।