স্বল্প-ব্যবহৃত ঢাকা-আরিচা রুটে যানবাহনের চাপ ফিরেছে
একসময় দেশের অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ রুট ছিল ঢাকা-আরিচা রুট। অন্তত ২২টি জেলার মানুষ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য এই রুট ব্যবহার করত। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর রুটটি আবেদন হারায়। তবে ঢাকা-আরিচা রুটে যানবাহনের চাপ ফিরে আসছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে ঈদের সময় এই ফেরিঘাট এলাকায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি ও যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল নিত্যদিনের। ফেরি পার হতে লেগে যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই এ রুটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ এতটাই কমে যায় যে এরপর ফেরিকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
পদ্মা সেতু চালুর পর অল্প কিছু গন্তব্যে যাওয়ার জন্য এই রুট ব্যবহার করা হচ্ছিল। তার মধ্যে আছে যশোর, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, কালিগঞ্জ, মধুখালী, কামারখালী, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া ও পাবনা। পরিবহনগুলোর মধ্যে দ্রুতি, সাউদিয়া, বিকাশ, সাকুরা, শ্যামলী, এনা ও দিগন্ত এই রুটে সার্ভিস দিচ্ছিল।
কিন্তু ঈদের কারণে আবার এই রুটের ব্যস্ততা ফিরে এল। গাজীপুর-টাঙ্গাইল-এলেঞ্জগা রুটে ব্যপক যানজট থাকায় উত্তরবঙ্গের অনেক পরিবহন এখন এই পথে যাচ্ছে।
আবার উত্তরবঙ্গের বহু যাত্রী—বিশেষ করে পাবনা জেলার—সরাসরি কোনো বাসে না উঠে আরিচা ফেরিঘাট হয়ে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছে।
অর্থাৎ এই যাত্রীরা লোকাল বাসে ঢাকা থেকে আরিচা ঘাট যায়। আরিচা ঘাট থেকে ফেরি, লঞ্চ বা স্পিডবোটে করে কাজিরহাট পৌঁছায়। এরপর সেখান থেকে অন্য একটি বাস ধরে চলে যায় গন্তব্যে। এতে করে সময়ও কম লাগে।
তেমনই একজন পাবনার যাত্রী সোহেল রানার সঙ্গে কথা হয়। শনিবার গাবতলীতে পাটুরিয়া ফেরিঘাটগামী একটা বাসে ওঠার সময় তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'শ্যামলী বাসে যেতে চেয়েছিলাম। বাসটি যাত্রীদের স্পীড বোটে পার করে। এতে পাবনা যেতে সময় লাগে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। কিন্তু গাবতলিতে এসে টিকিট পাইনি। তাই এখন ভেঙে ভেঙে যাব। ভেঙে গেলেও খুব বেশি সময় লাগে না।'
এসব কারণে আগের চাইতে পরিবহনের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে এই রুটে। যা এই সড়ককে আবার ব্যস্ত সড়কে পরিণত করেছে।
এই রুটে চলা শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. হাসান জানান, 'আরিচা হয়ে যে বাস যায়, সেটি সাড়ে ৩ ঘণ্টার মধ্যে পাবনা পৌঁছে যায়। ফলে এখন এত ভিড় থাকে যে টিকিট পাওয়া যায় না। অনেক যাত্রীকে আমাদের ফিরিয়ে দিতে হয়।'
পাবনা চলাচলকারী কিংস পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মোহাম্মদ সাঈদ মিয়া বলেন,' গাবতলীতে এসে যাত্রীরা আগে খোঁজে আরিচা হয়ে কোনো বাস যাবে কি না। না পেলে অনেকেই ভেঙে ভেঙে চলে যায়। কিন্তু যাদের সাথে বড় ব্যাগ ও বাচ্চা থাকে, তারাই এলেঙ্গা রুটে চলা বাসে ওঠে।'
ঢাকা-আরিচা রুট হয়ে চলা বাসের যদি এত চাহিদা থাকে, তাহলে কেন এই রুট দিয়ে উত্তরবঙ্গের বাস চলে না—এমন প্রশ্নের জবাবে সাইদ বলেন, 'আসলে পরিবহনগুলোর রুট পারমিট তো আগেই নেওয়া। আবার ঢাকা-আরিচা রুটে ফেরির ভাড়ার কারণে খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। যমুনা সেতু পার হয়ে গেলে টোল ভাড়া ১ হাজার টাকা। সেখানে ফেরি ভাড়া ৩ হাজার ৪০০ টাকা।'
এদিকে যাত্রীদের ভেঙে যাওয়ার কারণে ঢাকা থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত লোকাল বাসের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।
এ ব্যাপারে একজন বাস মালিক ও ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের ক্রীড়া সম্পাদক মো. আব্দুর রহিম বলেন, 'পদ্মা সেতু চালুর পর এই রুটে ২০০ বাসও চলত না। কিন্তু এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গাবতলী থেকে আরিচা-পাটুরিয়া ঘাটে তিন-চারশোর মতো গাড়ি চলছে।'
এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) তথ্যমতে, প্রচুর মানুষ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথ হয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরছে। এই নৌপথে পর্যাপ্ত ফেরি ও যাত্রীবাহী লঞ্চ থাকায় তারা সহজেই ঘাট পার হতে পারছে।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ জানান, এখানে ১৭টি ফেরি ও ৩৩টি লঞ্চ চলাচল করছে। আর পাটুরিয়ায় চলাচল করছে ১৯টি লঞ্চ এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে চলছে ১৪টি।
তিনি আরও বলেন, 'যাত্রীদের নিরাপদে নদী পারাপার করার জন্য ঘাট কর্তৃপক্ষ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় কোনো যাত্রী ও যানবাহনকেই বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। ঘাটে আসার পরপরই ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। ফলে এই পথে ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি যাচ্ছে মানুষ।'