ঢাকামুখো মানুষের চাপ: ফিরতি পথেও বাড়তি ভাড়া, যানজট ভোগান্তি
পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে আবারও রাজধানী ঢাকার কর্মব্যস্ত জীবনে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ।
বুধবার (১৯ জুন) থেকে সরকারি অফিস শুরু হলেও বেশিরভাগ মানুষ সপ্তাহান্ত, অর্থাৎ শুক্র ও শনিবারে বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। এতে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন স্থানে যানজট দেখা দিয়েছে।
আবার একইসঙ্গে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, "ঈদে ঢাকা থেকে যাওয়ার সময়ও মানুষকে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে। একইভাবে ঢাকায় ফিরতেও বেশি টাকা দিতে হয়েছে।"
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থেকে শনিবার (২২ জুন) ঢাকায় ফিরেছেন সৌম্য সরকার। স্বাভাবিক সময়ে ৮-৯ ঘণ্টা লাগলেও গতকাল তার সময় লেগেছে ১৮ ঘণ্টা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বাড়তি ভাড়ার ভোগান্তি।
ঢাকামুখী মানুষের চাপ বেশি থাকায় তিনি ব্র্যান্ডেড গাড়িতে সিট পাননি। ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা আসতে স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া দিতে হয় ১,০৭০-১,১০০ টাকা। কিন্তু টিকিট না পেয়ে লোকাল বাসেই তাকে ভাড়া গুনতে হয়েছে এক সিটের জন্য ১,৭০০ টাকা।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "২০১২ সালের দিকে ঢাকা আসতে সাড়ে ৭ ঘণ্টা লাগতো। আর এখন ১৮ ঘণ্টা লাগছে। শুক্রবার রাত ৮ টায় গাড়িতে উঠেছি। সকালে অফিস ধরার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ঢাকায় পৌঁছেছি শনিবার দুপুর ২টায়।"
রংপুর, গোবিন্দঞ্জ ও বঙ্গবন্ধু সেতুতে অনেক যানজট ছিলবলে জানান তিনি।
রাজশাহী থেকে শনিবার সকাল ১০টায় বাসে ওঠেন আতিকুর রহমান। টিবিএসকে তিনি বলেন, "২টা থেকে ২টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পৌঁছেছি সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে।"
"সিরাজগঞ্জ থেকে সাভার পর্যন্ত পুরো রাস্তা জ্যাম ছিল। বাসে সিট পাইনি। ইঞ্জিনের ওপর বসে আসতেও ১,০০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে," জানালেন তিনি।
উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শনিবার সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমের ঢাকামুখী টোল প্লাজায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ছিল। প্রায় সারাদিনই এ যানজটের মুখে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের।
শুধু উত্তরবঙ্গের গাড়িগুলোতেই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় ফিরতে যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে। এছাড়া, যানবাহনের চাপ থাকায় যানজটের ভোগান্তিতেও পড়তে হয়েছে।
মূলত ঈদ উপলক্ষে ১৬ থেকে ১৮জুন— এই তিনদিন ছিল সরকারি ছুটি। তবে অনেকেই ১৯ ও ২০ জুন, অর্থাৎ বুধ ও বৃহস্পতিবার বাড়তি ছুটি নিয়ে বাড়িতে পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে শুক্র ও শনিবারে ঢাকায় ফিরেছেন। এ কারণে সড়কে যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি।
শুক্রবার বরিশাল থেকে ঢাকা ফিরেছেন ফাহাদ সম্রাট। স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া ৬০০-৬৫০ টাকা হলেও এবার তাকে গুনতে হয়েছে ১,০০০ টাকা। টিবিএসকে তিনি বলেন, "হানিফ পরিবহনের টিকিটে ৮৫০ টাকা লিখে দিয়েছে। কিন্তু ভাড়া নিয়েছে ১,০০০ টাকা। তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছি, তারা বলছে ঈদের কারণে এভাবেই চলছে। ভাড়া না দিলে টিকেট দিচ্ছে না। আমাদের তো যেতে হবে।"
একইভাবে উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ জেলা এবং জামালপুর, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, খুলনা ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে ঢাকায় ফিরতে হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার টিবিএসকে বলেন, "বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে আমরা যেখানে অভিযোগ পেয়েছি, জরিমানা করেছি। গত শুক্রবারেও দেশের বিভিন্ন জেলায় আমাদের টিম সক্রিয় ছিল। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব।"
যানজটের বিষয়ে তিনি বলেন, "যানজট কিছুটা হতে পারে। তবে উল্লেখ করার মতো বড় ধরনের কোনো যানজট ছিল না।"