পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সাংবাদিক নেতারা
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের একটি বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রোববার (২৩ জুন) পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সাংবাদিক নেতাদের সাথে ডিএমপি কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন পুলিশ বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সদস্যদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রচারিত বিভিন্ন সংবাদের নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছিল। পরবর্তীতে সম্পাদক পরিষদ ও সাংবাদিক নেতারা বিপিএসসির লিখিত বক্তব্যের সমালোচনা করলে সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকের আহ্বান জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
বৈঠকে যোগ দেওয়া ডিএমপির দুই শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে আজ (২৪ জুন) জানতে চাওয়া হলেও তারা টিবিএস-এর কাছে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা ডিএমপি সদর দপ্তরের আরেক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, পুলিশ-সাংবাদিকদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, "সাংবাদিকরা পুলিশের শত্রু নয়। তবে আমরা বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা প্রত্যাশা করি। পুলিশের বিবৃতি দেওয়ার পর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।"
তিনি আরো বলেন, "ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বসে সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং উভয় পক্ষই এই ব্যাপারে সম্মত হয়েছে— পুলিশের বিবৃতিতে ব্যবহৃত কিছু শব্দ যথার্থ ছিল না।"
বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করে বিএফইউজের মহাসচিব দীপ আজাদ টিবিএসকে বলেন, "আমরা বলেছি পেশাদার সাংবাদিকেরা কোনো দিন অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন করেননি, করবেনও না।"
তিনি বলেন, "পুলিশ বাহিনীতে যেমন কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রয়েছেন, তেমনি সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাও অনেক আছেন। পেশাদার গণমাধ্যমে প্রকাশিত কোনো সংবাদে যদি ভুল তথ্য প্রকাশ হয়ে যায় তবে সেটি সংশ্লিষ্ট মিডিয়া হাউজকে অথবা ইউনিয়নকে জানাতে পারেন। তবে ঢালাও ভাবে নিউজ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন না।"
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "বিবৃতি সঠিক বা ভুল এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে সাংবাদিক নেতারা বলেছে প্রধানমন্ত্রী নিজেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম চলবে।"
তিনি জানিয়েছেন, "এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, পুলিশও দুর্নীতি বিরুদ্ধে সোচ্চার। কোনো সদস্য দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে পুলিশ অভ্যন্তরীণভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। সংবাদ নিয়ে তাদের আপত্তি নাই। তবে সংবাদ যেন পরিপূর্ণ ও বস্তুনিষ্ঠ হয়।"
গত ২১ জুন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সংবাদমাধ্যমের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে পুলিশ বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সদস্যদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রচারিত বিভিন্ন সংবাদকে 'অতিরঞ্জিত' হিসেবে অভিহিত করে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশে 'অধিকতর সতর্কতা' অবলম্বন করার অনুরোধ করা হয়েছিল।
সাবেক ও বর্তমান দুই পুলিশ সদস্যকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের জেরে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের পেশাজীবী সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
পরবর্তীতে রোববার (২৩ জুন) সাংবাদিকতা নিয়ে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানায় সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ।
সম্পাদক পরিষদ থেকে বলা হয়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধের নামে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে বিবৃতি দিয়েছে, তা স্বাধীন গণমাধ্যম ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চর্চার পরিপন্থি।