ইন্টারনেট না থাকায় ওয়াসার এটিএমগুলোতে মিলছে না পানি, ভোগান্তিতে ৪ লক্ষাধিক গ্রাহক
দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ঢাকা ওয়াসার এটিএম বুথকেন্দ্রিক সুপেয় পানি বিক্রি বন্ধ আছে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে। এতে বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর চার লাখেরও বেশি গ্রাহক।
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত প্রায় ২৫০ বুথের মাধ্যমে ৮০ পয়সা প্রতি লিটার দরে বিশুদ্ধ পানি বিক্রি করে ঢাকা ওয়াসা। প্রতিদিন প্রায় ১৫ লাখ লিটার পানি বিক্রি হয় এসব বুথ থেকে। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এসব বুথে পেমেন্ট কার্ডগুলো কাজ করছে না। তাই বাধ্য হয়ে বুথগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে।
গত তিনদিন রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, ফার্মগেট, মহাখালী, মতিঝিল, বাংলামোটরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বুথগুলো ঘুরে সেগুলো বন্ধ দেখা যায়। আর বুথের সামনে নোটিশ ঝুলানো। যাতে লেখা- "ইন্টারনেট না থাকায় এটিএম বুথের পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ইন্টারনেট আসার পরে পুনরায় পানি দেওয়া হবে।"
আগারগাঁওয়ের এটিএম বুথের নিয়মিত ক্রেতা আসাদুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এখান থেকে দুই-তিনদিন পর পর পরিবারের জন্য পানি সংগ্রহ করতাম। কিন্তু গত চারদিন ধরে মিনারেল ওয়াটার কিনে পান করতে হচ্ছে।''
তিনি যোগ করেন, ''যেখানে ১০০ টাকার পানিতে আমাদের এক সপ্তাহ চলত, সেখানে এখন দিনেই ২০০ টাকার বেশি লাগছে। দোকানেও পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ নেই।"
ফার্মগেটের বাসিন্দা যোহরা খাতুন টিবিএসকে বলেন, "পানির বুথ বন্ধ থাকায় এখন পানি ফুটিয়ে পান করতে হচ্ছে।''
তিনি আরও বলেন, ''আমাদের গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা প্রি-পেইড মিটার সিস্টেমের হওয়ায় গ্যাসও খুব সীমিত ব্যবহার করছি। তাই বাধ্য হয়ে লাইনের পানিই পান করতে হচ্ছে অনেক সময়। এতে বাসার অনেকেরই পেটে সমস্যা হয়েছে। একদিকে কারফিউ আবার খাবার পানির সংকট। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে হয়ত বেঁচে থাকাই দুষ্কর হবে।"
স্বল্পমূল্যে সুপেয় পানি সরবরাহের উদ্দেশে ২০১৭ সালে ঢাকা ওয়াসা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ড্রিংকওয়েলের সাথে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে রাজধানীর ৩৩০টি জায়গায় পানি সরবরাহের বুথ স্থাপন করে।
বর্তমানে এসব বুথের মধ্যে রাজধানীতে চালু থাকা ২৫০টি বুথ থেকে চার লাখের বেশি নিবন্ধিত গ্রাহক পানি সংগ্রহ করছেন। এর গ্রাহক সংখ্যাও দিন দিন উল্লেখজনকভাবে বাড়ছে। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় এখন এ গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
রাজধানীর পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতেও পানির এটিএম বুথ স্থাপন করেছে ড্রিংকওয়েল। ইন্টারনেট না থাকায় এসব শহরেও পানির সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
ড্রিংকওয়েলের কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন টিবিএসকে বলেন, "বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্তও আমাদের বুথগুলো সচল ছিল। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে আমাদের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। বুথগুলো গ্রাহকদের কার্ডের সাথে এমনভাবে যুক্ত করা যে ইন্টারনেট ব্যতীত কোনো সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা চাইলেই ম্যানুয়ালি পানি সরবরাহ করতে পারছি না। এতে পানির গুণাগুণ ঠিক থাকবে না। ইন্টারনেট চালু হলে আমাদের বুথগুলো সচল হবে।"
ঢাকা ওয়াসা পাইপের মাধ্যমেও রাজধানীজুড়ে বাসা-বাড়িতে পানি সরবরাহ করে থাকে। তবে মাঝে মাঝে পাইপ ফুটো হওয়া কিংবা অপরিষ্কারের কারণে দূষিত হওয়ায় নগরবাসী এই পানিকে অনিরাপদ মনে করে।