মিরপুরে সহিংসতায় বিপর্যস্ত মানুষেরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়
রাজধানীর মিরপুর-১০ এ সদ্য জন্ম নেওয়া ১৫ দিনের শিশু রাইফা ইসলাম পৃথিবীর আলো ঠিকভাবে দেখার আগেই শুনেছে সাইন্ড গ্রেনেড ও বুলেটের শব্দ। গত বুধবার থেকে চলা আন্দোলনের মধ্যে পুলিশের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে বার বার আঁতকে উঠছে রাইফা।
শিশুটির বাবা আব্দুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত দুই দিন পরিবেশ কিছুটা শান্ত থাকলেও ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠছে রাইফা।"
তিনি আরও বলেন, "মিরপুর-১০ এ গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যে ধরনের পরিস্থিতি ছিল তা যেকোনো যুদ্ধক্ষেত্রের থেকেও ভয়াবহ ছিল। আমার বাসার সামনের গলিতেও পুলিশের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেড পড়েছে কয়েকবার। এছাড়া কিছুক্ষণ পর পর গলিতে গোলাগুলির আওয়াজ তো ছিলই।"
আব্দুর রহমানেরও দুঃস্বপ্নে বেশ কয়েকবার ঘুম ভেঙেছে। শুধু তিনি নন; রাজধানীর বহু এলাকার অবস্থাই এমন।
রহমান বলেন, "কখনও কখনও আমি নিজেও ভয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠছি। মনে হয় আমাকে যেকোনো সময় গুলি করা হবে।"
কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাসুম আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "আন্দোলনের সময় আমাদের গলিতে প্রবেশ করেও পুলিশ গুলি ছুড়েছে। আমাদের এ এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন। এখন কারফিউ চললেও বাসার বাহিরে বের হতে ভয় পাচ্ছি।"
সহিংসতায় ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস, গুলির শব্দে নগরবাসী এখনও আতঙ্কে দিন পার করছে। সাথে সাথে এসব এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন চরম ক্ষতির মধ্যে।
মিরপুর এলাকার রিকশা চালক মো. কবির টিবিএসকে বলেন, "এখন সংসার চালানোই কষ্টের। রিকশা নিয়ে বের হলেই মালিককে ৩৫০ টাকা দিতে হয়। এরপরে ৩০০ টাকাও ইনকাম হয় না। আগে ১ হাজার টাকার বেশি থাকতো।"
রিকশা চালক আরও বলেন, "রাস্তায় মানুষও কম বের হয়, আমাদের ইনকামও কম। রিকশা ভাড়ার খরচও যোগাতে পারিনা। আমরা এমন পরিস্থিতি চাই না।"
মিরপুর-১০ প্রিন্স সুইটস এন্ড বেকারির ম্যানেজার আবু রায়হান প্রায় এক সপ্তাহ পর দোকান খুলেছেন। তিনিও ব্যবসার একই পরিস্থিতির কথা জানায়।
আবু রায়হান বলেন, "১৭ জুলাই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দোকান বন্ধ করে দেই। ৪০ কেজির মতো মিষ্টি নষ্ট হয়েছে। ফাস্টফুড, খাবার আইটেম ১০ হাজার টাকার রিটার্ন দিতে হয়েছে। দোকানে ১০ জন কর্মচারী, সবাই বসা। আমাদের অধিকাংশ মিষ্টি ও অন্যান্য খাবার নষ্ট হয়ে গেছে এই কয়দিনে। আজ ঝুঁকি নিয়ে দোকান খুলেছি।"
তিনি আরও বলেন, "স্বাভাবিক সময়ে আমাদের বিক্রি হয় ৫০ হাজারের মতো। আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে দোকান খুলেছি ১০০০ টাকার বেশি খরচ হয়েছে, ১০০ টাকা বিক্রি নেই।"
মিরপুরে সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হন আরও কয়েকজন। ফুটপাতের ফল বিক্রেতা ইলিয়াস টিবিএসকে বলেন, "বৃহস্পতিবার গোলাগুলির মধ্যে দোকান কোনভাবে বন্ধ করে যেতে হয়েছে। অর্ধেকেরও বেশি মালামাল লুট হয়ে গেছে।"
মিরপুরে এখনও সংঘর্ষের দাগ রয়ে গেছে। দেখা যাচ্ছে ভাঙা জানালা, কাঁচের টুকরো, আগুনে পোড়া দোকান, উপড়ে পড়া গাছ ও ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ডিভাইডার।
সহিংসতায় দৈনন্দিন জীবন যেন থেমে গিয়েছিল। এখন এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়।
মিরপুরের ইলেকট্রনিকস এর দোকানী মজিবুর রহমান বলেন, "আন্দোলনের সময় দোকানের দরজা বন্ধ করে ভিতরে আশ্রয় নিতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতি আমি আমার জীবনে দেখিনি। আমরা চাই দ্রুত সমস্যা সমাধান হয়ে দোকানপাট খুলে দিক।"