আমার বাবা নির্দোষ; দয়া করে পুলিশকে বলুন তাকে ছেড়ে দিতে: ডিবি গেটে স্বজনদের খোঁজে আহাজারি
চার মেয়ে ও শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার মিন্টো রোডে ডিবি সদর দপ্তরের বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন বাবলী বেগম (৩০)। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকালে রাজাবাজারের বাসা থেকে তার স্বামী পিক-আপ ভ্যান চালক নাসিরকে তুলে নেওয়ার পর, ডিবি অফিসের সামনে তিন ঘণ্টা যাবত অপেক্ষা করছিলেন তারা।
সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বাবলী বলেন, "কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে আমার স্বামীর কোনো সম্পর্ক নেই।"
বাবলী জানান, "সকালে আমি বাইরে ছিলাম। আমার স্বামী বাসায় ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ করে বড় মেয়ে রাইসা ফোন করে জানায় পুলিশ বাবাকে নিয়ে যাচ্ছে।"
"এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল করে নাসির জানায় তাকে মিন্টু রোডে ডিবি অফিসে আনা হয়েছে। পরে চার মেয়ে ও শ্বাশুড়িকে নিয়ে এখানে আসি।"
"এখানে আমার কথা কেউ শুনছে না। মেয়েরা তাদের বাবাকে দেখার জন্য কান্নাকাটি করছে। কীভাবে কী করবো, কিছুই বুঝতে পারছি না," অসহায় কণ্ঠে জানালেন বুবলী।
বুবলী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তার ১৩ বছরের মেয়ে রাইসা বলে, "আঙ্কেল, আমার বাবা নির্দোষ। কোটা আন্দোলনের সময় সে কোনো মিছিলে যায়নি। দয়া করে পুলিশকে বলুন, তাকে ছেড়ে দিতে।"
এ সময় নাসিরের মা রোমেলা খাতুনকে (৫৮) কাঁদতে দেখা যায়।
তিনি বলেন, "আমরা শুধু নাসিরকে দেখতে চাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা কিছুই বলছেন না।"
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত এই প্রতিবেদক ডিবি অফিসের অভ্যর্থনা কক্ষে অবস্থান করেন। এই সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ২০টি পরিবারের সদস্যরা এসেছেন তাদের স্বজনের খোঁজ নিতে। সবাই ডিবির অভ্যর্থনা কক্ষে এসে স্বজনদের নাম পরিচয় দিয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে বল হচ্ছে তারা কিছু জানেন না।
কুলসুম বেগম (৪৫) সকাল থেকে ডিবি গেটের অভ্যর্থনা কক্ষে অপেক্ষা করছেন। কোনো পুলিশ কর্মকর্তা দেখলেই ছেলের পরিচয় দিয়ে তার খোঁজ জানার চেষ্টা করছেন।
"সকাল থেকে বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে বলেছি, কেউ ছেলের সন্ধান দিতে পারেনি," বলেন কুলসুম বেগম।
তিনি জানান, "আল-আমীন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস, এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি (আইইজবিএটি) ইংরেজি বিভাগে শিক্ষার্থী। সম্প্রতি সে বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে। গত সোমবার দুপুরে সে পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার পথে পুলিশ তাকে আটক করে। পরে তারা আল-আমীনের ফোন চেক তাকে গ্রেপ্তার করে।"
কুলসুম বেগম বলেন, "আমরা কয়েকজন উত্তরা পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করেছি। থানা থেকে বলা হয়েছে তারা সবাইকে ডিবিতে প্রেরণ করেছে। আমার ছেলেটা নির্দোষ, আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে চাই।"
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন-অর-রশীদকে একাধিকবার ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।