যেভাবে ভাইরাল তাপসের ছবি
দিনটি ছিল ৩ আগস্ট, যেদিন মাস ধরে চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আরো তীব্র আকার ধারণ করে সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল। ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টায় আমার সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট ছিল। সেই ফ্লাইট ধরতে যথারীতি এয়ারপোর্টে পৌঁছাই।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে এশিয়ান জার্নালিজম ফেলোশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য এক মাস আগে থেকেই আমার ফ্লাইট নির্ধারিত ছিল।
দেশের এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে যেহেতু অনেক রাজনৈতিক নেতারই দেশ ছেড়ে পালানোর কথা শোনা যাচ্ছিল, তাই একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি এয়ারপোর্টে পৌঁছে সতর্ক নজর রাখছিলাম
সৌভাগ্যবশত বিজনেস ক্লাসে সিট ফাঁকা থাকায় আমার সিটটি ইকোনমি ক্লাস থেকে পরিবর্তন করে বিজনেস ক্লাসে দেওয়া হয়। দেখলাম, বিজনেস ক্লাসে যাত্রী মাত্র চারজন।
ইতিমধ্যে ফ্লাইটে আমাদের বাদাম ও জুস পরিবেশন করা হয়েছিল। ফ্লাইটটি উড্ডয়নেরও প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছিল।
হঠাৎই খেয়াল করলাম, কেবিন ক্রুরা এক ভিআইপি যাত্রীকে স্বাগত জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আমি তৎক্ষণাৎ আমার মোবাইল ফোনের ক্যামেরাটি চালু করি। দেখলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বিমানটিতে উঠেছেন। তিনি ছিলেন বিমানটিতে ওঠা শেষ যাত্রী, যিনি সংঘাত-সংঘর্ষের আগুনে জ্বলতে থাকা তার শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। তিনি একাই ছিলেন। তার পরনে ছিল কালো স্যুট, হাতে ছিল ছোট একটি ব্যাগ।
যদিও সংঘাত-সংঘর্ষের আগুনে পুরো দেশ জ্বলছিল, কিন্তু তার চোখে-মুখে সেটির কোনো চিহ্নই ছিল না। সুন্দর করে আঁচড়ানো চুলে তাকে বেশ সতেজ দেখাচ্ছিল। তিনি কেবিনের প্রথম সারিতে বসেছিলেন। আমিও একই পাশে শেষের সারিতে ছিলাম।
যদিও আমি তাকে ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম না, তবে আমার মনে হলো বিমানে উঠেই তিনি বেশ লম্বা একটি ঘুম দিয়েছিলেন। কারণ, চার ঘণ্টা দীর্ঘ যাত্রায় অবতরণের মাত্র আধাঘণ্টা আগে তাকে খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল।
তিনি বিমানে ওঠার পরপরই আমি ফোনের ক্যামেরায় তার ছবি তুলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি আমার অফিসে পাঠিয়ে দেই। কেবল এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে রাজনৈতিক নেতাদের দেশ ছেড়ে পালানোর বিষয়টি সত্য কি না।
আমি আমার অফিসের নিজেদের একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ছবিটি শেয়ার করি। যদিও এর উদ্দেশ্য ছবিটি প্রকাশ করা ছিল না, কেবল এটাই নিশ্চিত হওয়া উদ্দেশ্য ছিল যে দেশের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে ভিআইপিরা দেশ ছাড়ছেন।
দেশে চলমান বিক্ষোভের কারণে প্রতিদিনই বহু ঘটনা ঘটছিল। এ কারণে আমরাও ছবিটার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরের দিনই দেখলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় তাপসের এ ছবি ভাইরাল। আমি জানি না কে ছবিটি অন্য কাউকে শেয়ার করেছিল। আর এরপরই ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়।