শেষ হলো ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ সমাবেশ: ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই প্রক্লেমেশন ঘোষণার দাবি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা 'মার্চ ফর ইউনিটি' সমাবেশ থেকে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই প্রক্লেমেশন ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে এক শহিদের বাবা মো. আবুল আসাদের বক্তব্যের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাঙ্গণে সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আগামী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জুলাই প্রক্লেমেশন ঘোষণা করতে হবে। আগামী নির্বাচিত সরকার নতুন সংবিধান রচনা করবে। আর সেই সংসদ হবে গণপরিষদ। তারাই সংবিধান রচনার পর চূড়ান্ত অনুমোদন করবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, খুনি ও সন্ত্রাসীরা ঘোরাফেরা করছে। আমরা গণহত্যার বিচার চাই, সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি চাই, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত চাই, দ্রব্যমূল্য নাগালের মধ্যে চাই, আহতদের সুচিকিৎসা চাই।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, কিন্তু খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার হয়নি। ভারতে পলাতক খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একসঙ্গে নতুন বাংলাদেশকে বিনির্মাণ না করা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না ছাত্ররা।
এর আগে 'তুমি কে আমি কে, বাংলাদেশ বাংলাদেশ'; 'আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ'; 'দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা'; 'ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা' ইত্যাদি স্লোগানে বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হন কয়েক হাজার মানুষ। এখনও বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল আসছে।
কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে এসেছেন ইমরান হোসেন। তিনি জানান, ১৯ জুলাই মিরপুরে আন্দোলনে অংশ নিয়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে ডাক্তাররা তার একটি পা কেটে কৃত্রিম পা প্রতিস্থাপন করেছেন।
তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আমরা সহযোদ্ধারা এক সাথে মিলিত হবো এজন্যই এখানে এসেছি। আমি পা হারিয়েছি দুঃখ নাই। তবে যারা আমার ভাইদের শহীদ করেছে তাদের বিচার চাই'।
বেলা ৩টার আগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিকেল ৪টার দিকে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে একজন শহীদের বাবার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে এ সমাবেশ শেষ হয়।
শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান বলেন, 'আমার ছেলে শাহরিয়ার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় মিরপুর ১০ এ শহীদ হয়েছে। আমাদের কান্না কখনো থামবে না, এই বেদনা শেষ হওয়ার নয়। খুনি হাসিনা ও তার হেলমেট বাহিনী আমাদের ওপর পাখির মতো গুলি চালিয়েছে। আমরা খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই।'
চট্টগ্রামের ছাত্র সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, 'পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় বিপ্লব ঘোষণা করা হবে।'
গতকাল দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে বাংলামোটরে নিজেদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আজকের 'মার্চ ফর ইউনিটি' কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে বলা হয়, আজ (৩১ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার বেলা ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে 'মার্চ ফর ইউনিটি' (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি পালন করা হবে।
যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি আজ শহীদ মিনারে বেলা ৩টায় 'জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র' শীর্ষক একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা জানিয়েছিল।
তবে গতকাল (৩০ ডিসেম্বর) অন্তবর্তী সরকার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করবে এমন ঘোষণা দেওয়ার পর এ কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে আসেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, 'আমরা পূর্ববর্তী যে কর্মসূচি দিয়েছি, সে ঘোষণা অনুযায়ী আমরা বিপ্লবীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একত্রিত হব। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র আসবে, কিন্তু তাই বলে আমাদের একত্রিত হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে না।'
'আগামীকাল শহীদ মিনারে আহত থেকে শুরু করে শহীদ পরিবার এবং ঢাকা শহরের মা ও বোনেরা যেভাবে ৫ আগস্ট রাজপথে নেমে এসেছিল, সেভাবে প্রোক্লেমেশনের পক্ষে রাজপথে নেমে আসবে,' বলেন তিনি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কয়েকজন নেতা টিবিএসকে জানিয়েছেন, তাদের বৈঠকে শহীদ মিনারে অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে কমিটির একটি প্রতিনিধি দল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।