সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন গোপালগঞ্জে, অস্ত্র নিয়ে মিছিল
শেখ হাসিনাকে 'দেশত্যাগে বাধ্য করা'র প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে গোপালগঞ্জে। তাঁদের হাতে দেখা গেছে নানান দেশীয় তৈরি অস্ত্র। সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতেও আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এসময় একজন সেনাসদস্যের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে মিছিল করা হয়। এ ঘটনায় পাঁচ সেনাসদস্যসহ সাতজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
শনিবার (১০ আগস্ট) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ছবি তুলতে গিয়ে মারধরের শিকার ও লাঞ্ছিত হন দুই সাংবাদিক– চ্যানেল ২৪-এর গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি বাদল সাহা ও মাছরাঙার টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সাবেত আহমেদ।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেলা তিনটার দিকে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। কর্মসূচিতে অংশ নেন সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ও জালালাবাদ ইউনিয়ন এবং কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দেশীয় অস্ত্রেসজ্জিত নেতা-কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই তিন ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা বেলা তিনটার দিকে পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হয়। এরপরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন গোপালগঞ্জে কর্মরত সেনাসদস্যরা। তখন তাঁদের উদ্দেশ্যে 'ভুয়া, ভুয়া' স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। সেনাসদস্যদের সাথে উত্তপ্ত বাগ্বিতণ্ডায় জড়ায় বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা সেনাসদস্যদের মারধর শুরু করে, এসময় ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন সেনাসদস্যরা। কিন্তু, বিক্ষোভকারীরা মারমুখো হয়ে হামলা করলে তারা দৌড়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। এসময় এ সময় এক সেনাসদস্যের কাছ থেকে একটি অস্ত্র নিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
সেই অস্ত্রটি নিয়ে বিক্ষোভকারীরা মিছিলও করেছে। পরে সেটি তারা গোপীনাথপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে জমা দিতে গেলে– তারা অস্ত্রটি নিতে রাজি হয়নি। তখন এটি গোপীনাথপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান লাচ্চু শরীফের কাছে জমা দেওয়া হয়।
লাচ্চু শরীফ একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা তাঁর কাছে অস্ত্রটি জমা দিয়ে যান। তিনি ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীকে অস্ত্রের বিষয়টি জানিয়েছেন। তাঁরা অস্ত্র নিতে আসছেন বলে জানিয়েছেন। তার আগপর্যন্ত অস্ত্রটি তাঁর (লাচ্চু) কাছে রাখতে বলেছেন।
এবিষয়ে রাতে একটি বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর। এতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে সেনা টহল দলের ওপর আক্রমণ করে। এসময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা সেনাসদস্যদের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে এবং দেশীয় তৈরি অস্ত্র দিয়ে টহল দলের সদস্যদের আঘাত করলে ৩ জন অফিসার, একজন জুনিয়র কমিশন অফিসার ও ৫ জন সেনাসদস্য আহত হন।
আহত সেনাসদস্যরা বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত ও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়াও সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এবং আরও দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী চার রাউন্ড গুলি করে, এবং পরিস্থিতির তীব্রতা পরিলক্ষিত হওয়ায় ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে- বলেও জানায় আইএসপিআর।