গাজীপুরে পুলিশ কর্মকর্তার গাড়িতে শিক্ষার্থীদের তল্লাশির চেষ্টা, আহত ৩
গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গভীর রাতে সাইরেন বাজিয়ে চলন্ত একটি জিপ গাড়িকে সড়কে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা থামতে সংকেত দিলে চালক গাড়ি না থামিয়ে চলে যান। পরবর্তীকে শিক্ষার্থীরা গাড়িটিকে ধাওয়া দিয়ে আটকানোর পর চালকের আসনে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পালিয়ে যান।
গত রোববার (১১ আগস্ট) রাত সাড়ে ৩ টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানা এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন এবং পরবর্তীতে পুলিশের ঐ কর্মকর্তাকে উদ্ধার করেন। সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা গাড়িটি জব্দ করার পর সেখান থেকে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের স্টিকার, আট রাউন্ড গুলিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মাহবুব আলম জানিয়েছেন, পালিয়ে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তার নাম মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটে কর্মরত।
মাহবুব আলম ঐ পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আরো বলেন, সাইফুল ইসলাম ময়মনসিংহ এলাকা থেকে রোববার গভীর রাতে নিজের জিপ গাড়িতে করে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলেন। গাজীপুরে গভীর রাতে মহাসড়কে তার গাড়িকে আটকানোর চেষ্টা করায় তিনি ডাকাত ভেবে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। পরে তিনি পাশের এক বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন।
পরবর্তীতে তিনি পুলিশকে ঘটনাটি জানালে তাকে গিয়ে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজন ছিলেন শিক্ষার্থী। আহত শিক্ষার্থীরা হলেন: মাজেদুর রহমান রুদ্র (২৪) এবং সীমান্ত (২২)। তারা গাজীপুর রয়েল নার্সিং কলেজের ছাত্র।
তারা গাজীপুর মহানগরীর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে জানিয়েছেন।
আহত অপর ব্যক্তি রাইড শেয়ারের মোটরসাইকেল চালক মোজাম্মেল হক (৪৫)।
শিক্ষার্থী আহত মাজেদুর রহমান গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, তারা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দুই শিফটে মহাসড়কে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছিলেন। রাতের শিফটে গত রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন শেষে তারা কয়েকজন ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় একটি জিপ গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে অনেক দ্রুত গতিতে চলে যাওয়ার সময় সেটিকে থামার সংকেত দেন তারা।
মাজেদুর রহমান বলেন, "চালক গাড়ি থামালে আমরা আমাদের পরিচয় দিয়ে চালককে পরিচয়পত্র দেখাই। চালকের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে এনটিভির সাংবাদিক পরিচয় দেন। এত দামি গাড়ি ও গাড়িতে লাল নীল সাইরেন থাকায় আমাদের সন্দেহ হয় এবং আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করি।"
মাজেদ আরও বলেন, "এ সময় চালক হঠাৎ আমাদের এক শিক্ষার্থীর পায়ের ওপর দিয়ে চাকা উঠিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। অন্য শিক্ষার্থীরা পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা রাইড শেয়ারের এক মোটরসাইকেল চালককে অনুরোধ করে গাড়িটি ধাওয়া করে গাজীপুর মহানগরীর তারগাছ এলাকায় তায়রুন্নেছা মেডিক্যালের সামনে ধরে ফেলে। এসময় জিপ গাড়ির চালক আবারো মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সেটি গাড়ির নিচে চাপা পড়ে ও যাত্রীরা দুরে ছিটকে পড়ে।"
"স্থানীয়রা এরপর গাড়িটিকে আটক করে এবং শিক্ষার্থীদের সাথে গাড়ি তল্লাশি শুরু করলে চালকের আসনে থাকা ব্যক্তি আমাদের লক্ষ করে কয়েক রাউন্ড গুলি করে দৌড়ে পালিয়ে যায়।"
এ সময় শিক্ষার্থীরা গাড়িটি তল্লাশি করে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের এয়ারপোর্ট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের অনেকগুলি ভিজিটিং কার্ড খুঁজে পান। এছাড়া ঐ গাড়ি থেকে পিস্তলের ম্যাগাজিন, ৮ রাউন্ড গুলি, বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভির একটি লোগোসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পড়ে সেনাবাহিনী ও বিজিরি সদস্যরা এসব জব্দ করেন।
আহত মাজেদুর রহমান বলেন, "পড়ে গিয়ে আমি ও আমার বন্ধু গুরুতর আহত হয়েছি। একটি গুলি আমার পেটের চামড়া ঘেঁষে চলে যায়। আমি অল্পের জন্য জীবনে রক্ষা পেয়েছি। তিনি নিজের আসল পরিচয় দিলে কোন সমস্যাই ছিল না।"
পুলিশ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, রোববার সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা এলাকায় তার শ্বশুরের জানাজায় অংশ নিয়ে তিনি ঢাকায় তার কর্মস্থলে ফেরার সময় রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় কয়েকজন যুবক তার গাড়ির গতি রোধ করেন। এ সময় যুবকেরা তার গাড়ির কাগজ দেখতে চাইলে তিনি তা দেখান। তারপর তল্লাশি করার কথা বলে তাকে গাড়ি থেকে নামতে বলা হয়।
তিনি বলেন, তিনি একজনের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখতে পান। এত রাতে শিক্ষার্থীর পরিচয়ে ডাকাতির চেষ্টা করা হচ্ছে ভেবে তিনি গাড়ি না থামিয়ে ঢাকার উদ্দেশে দ্রুত ঐ এলাকা ত্যাগ করার চেষ্টা করেন।
তিনি আরো বলেন, বড়বাড়ি এলাকা পর্যন্ত গেলে দুটি বাইক তার গাড়ির গতি রোধের চেষ্টা করে। এ সময় তিনি দ্রুত গাড়ি চালানোর চেষ্টা করলে ধারালো কিছু দিয়ে চাকায় আঘাত করে। এতে তার গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে সামনে থাকা বাইকে ধাক্কা লাগে। এ অবস্থায় তার সঙ্গে থাকা পিস্তল দিয়ে একটি ফাঁকা গুলি করেন।
আত্মরক্ষার জন্য গাড়িটি রাস্তায় রেখে পাশে এক বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। পরে জিএমপির পুলিশকে ঘটনাটি জানালে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
গাড়িতে এন টিভির স্টিকার ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্প্রতি পুলিশের প্রতি জনরোষ ঠেকাতে তথা আত্মরক্ষার জন্য গাড়িতে এনটিভির স্টিকার ব্যবহার করেছেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, "শুনেছি এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি তারা শিক্ষার্থী ছিল কিনা। ঘটনার তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"