রোগীর ফাইল না দেওয়ায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে হামলা, তত্ত্বাবধায়কসহ আহত ৫
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক রোগীর ফাইল না দেওয়ার ঘটনায় চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ওপর হামলা হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর স্বজন পরিচয়ে এক তরুণ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এ হামলা চালায়। এতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন। এদের মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হামলার ঘটনায় জরুরি বিভাগ ছাড়া হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন শারমিন নামের এক রোগী। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ওই রোগীর স্বজন পরিচয় দিয়ে রায়হান পাহাড় নামে এক তরুণ শারমিনের ফাইল আনতে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় নার্সদের কক্ষে যান। সেখানে দায়িত্বরত নার্স নাসিমা আক্তার চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া ফাইল দেওয়া যাবে না বলে জানান। তখন রায়হান ৪-৫ জন সহযোগী নিয়ে ওই নার্সের সাথে অশোভন আচরণ করেন। একপর্যায়ে মারমুখী আচরণ করলে নার্সের সহকর্মীরা তাদের বাধা দেন।
এর কিছুক্ষণ পর রায়হায় আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালের কর্মীদের ওপর হামলা চালান। এতে জরুরি বিভাগের ব্রাদার আবু হানিফ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী দুলাল ঢালী, বাবুর্চি খালেদ সিকদার, অফিস সহকারী জোবায়ের হোসেন ও ফার্মাসিস্ট বিকাশ কুমার সরকার আহত হন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও হামলা করা হয়। এদের মধ্যে কর্মচারী আব্দুল খালেক সিকদারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় দুপুর ১২টা থেকে চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা জরুরি বিভাগ ছাড়া সব বিভাগের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। তারা চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এতে ভোগান্তিতে পড়েন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
ভুক্তভোগী নার্স নাসিমা আক্তার বলেন, 'আমরা রোগীদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তখন চিকিৎসক রাউন্ডে ছিলেন। এমন সময় নার্সদের কক্ষে মেডিসিন বিভাগের এক রোগীর স্বজন পরিচয় দিয়ে রোগীর ফাইল নিতে আসেন ওই তরুণ। তাকে শুধু বলেছি এভাবে কোনো রোগীর ফাইল আমরা দিতে পারি না। তাকে চিকিৎসকের অনুমতি আনতে বলি। আর তখনই তিনি আমার ওপর চড়াও হন।'
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রায়হানের নম্বরে কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
চিকিৎসকদের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, কিছুদিন পর পরই এ রকম তুচ্ছ ঘটনার কারণে আমরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হই। এমন হামলা অপমান আমরা সহ্য করব না। হামলাকারীদের আটক না করা পর্যন্ত জরুরি বিভাগ ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান বলেন, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালের সব সেবা বন্ধ থাকবে। শুধু জরুরি বিভাগের সেবা চালু থাকবে। আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যেই মামলা করা হবে। হাসপাতালে নিরাপত্তায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দীহ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট কর্মী ও রোগীদের নিরাপত্তায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।