গাজী টায়ার্সে অবাধ লুটপাট, পোড়া ভবনের ভেতরে এখনও জ্বলছে আগুন
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রূপসী এলাকায় আগুনে পুড়ে যাওয়া গাজী টায়ার্স কারখানায় অবাধে লুটপাট চলছে। কারখানার ভবন থেকে মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল লুটপাটের পর এবার টিন, লোহা ও পাইপসহ বিভিন্ন ধরনের ধাতব বস্তু খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যে যা পারছেন তাই নিয়ে যাচ্ছেন। নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে থাকা কর্মীরাও রয়েছেন নীরব ভূমিকায়। কাউকেই কোনো ধরনের বাধা দিচ্ছেন না তারা। নিরাপত্তারক্ষীর পোশাক ছেড়ে তারা কারখানার ভেতরে গিয়ে অবস্থান নিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) গাজী টায়ার্স কারখানায় চতুর্থ দফায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর আগে গত ৫ আগস্ট থেকে ধারবাহিকভাবে প্রতিদিনই কিছু না কিছু লুটপাট হয়েছে এই কারখানা থেকে। ২৫ আগস্ট লুটপাট নিয়ে বিরোধের জেরে কারখানার একটি ভবনে অগ্নিসংযোগের পর আলোচনায় আসে কারখানাটি।
অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা জানান, এই কারখানার বিভিন্ন তলায় আটকে অনেকেই মারা গেছেন।
লুটপাটের জেরে অগ্নিকাণ্ডের পরও লুটপাটকারীরা থেমে নেই। প্রতিনিয়ত কারখানার দেয়াল টপকে, কাঁটাতার ভেঙে ভেতরে ঢুকে লুটপাট চালানো হচ্ছে।
সরেজমিনে আজ শনিবার বিকেলে কারখানাটিতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ২০-২৫ জনকে দেখা যায়। তাদের প্রত্যেকের হাতেই ধাতব বস্তু দেখা যায়। এদের কাউকে কাউকে দলবদ্ধ হয়ে বড় বড় টিন খুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
পোড়া ভবনের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় এখনও আগুন জ্বলছে। উপস্থিত কয়েকজন জানান, ভেতরে আগুন জ্বলছেই। একাই জ্বলছে, আবার একাই নিভছে। রাতের বেলায় বাইরে থেকে পোড়া ভবনের ভেতর আগুন জ্বলতে দেখা যায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভবনটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরেও লুটপাটকারীরা তাতে কর্ণপাত করছে না।
ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ছবি ও ভিডিও ধারণ শুরু করতেই লুটপাটকারীরা দৌড়ে পালাতে শুরু করে। সেখানে কথা হয় খাদুন গ্রামের এক বাসিন্দার সঙ্গে। তিনি বলেন, সবাই তো এখান থেকে কিছু না কিছু নিতাছে। আমি এমনিতেই আসছি দেখতে। কিছু নিতে আসি নাই। আমি পাশের গ্রামে থাকি, বিকালে এখানে হাঁটতে আসছি।' এর কিছুক্ষণ পরই এই ব্যক্তিকে একটি টিন নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এদিকে আজ বিকেলে রূপসী এলাকায় তারাব পৌরসভা বিএনপির উদ্যোগে জনসভার আয়োজন করা হয়। জনসভায় যোগ দেওয়া বিএনপির কিছু কর্মীকেও সভা ছেড়ে কারখানার ভেতরে ঢুকতে দেখা যায়।
কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, '৫ আগস্ট থেকে ধারাবাহিক লুটপাট চলছেই। পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী কাউরে মানে না। এখন কারখানার ইট খুলে নিয়ে যাবে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টুকটাক লুটপাট চলছেই। চোখের সামনে কারখানাটি ধ্বংস হয়ে যেতে দেখে খারাপ লাগছে।'