সমুদ্রবন্দরে লাইটার জাহাজ নিয়ন্ত্রণে নতুন কো-অর্ডিনেশন সেল গঠন
চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন সমুদ্রবন্দরে মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজযোগে দেশের বিভিন্ন নৌ-রুটে পণ্য পরিবহন নিয়ন্ত্রণে একটি নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত লাইটার জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমূহে পণ্য পরিবহন নীতিমালা, ২০২৪ নামে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। পরের দিন বুধবার (১৬ অক্টোবর) নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত এক গেজেটের মাধ্যমে নীতিমালাটি প্রকাশ করে।
তবে শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকা লাইটার জাহাজগুলো এই সেলের অধীনে না থেকে নিজেদের পণ্য নিজেদের জাহাজে পরিবহন করতে পারবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাইটার জাহাজযোগে পণ্য পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হতো ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিওটিসি)- এর অধীনে। এই সেলের নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের স্বোচ্ছাচারীতার বিরুদ্ধে আদালতে রিট করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ডব্লিওটিসির কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করে।
পরবর্তীতে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপে লাইটার জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনের সমন্বয়ে 'বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল' (বিডব্লিউটিসিসি) গঠন করা হয়েছে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব দেলোয়ারা বেগম স্বাক্ষতির নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমূহ ও সংলগ্ন এলাকা থেকে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া, নির্বিঘ্ন ও সুশৃঙ্খলভাবে পণ্য পরিবহন করার স্বার্থে সরকার এই নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। খাদ্য পণ্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সারসহ সকল আমদানি-রপ্তানি পণ্য যথাসময়ে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে সুষম সরবরাহ নিশ্চিতে সহায়তা করবে এই নীতিমালা।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, বিডব্লিউটিসিসি লাইটার জাহাজ বরাদ্দের জন্য লাইটার জাহাজের মালিক, আমদানি–রপ্তানিকারক, পণ্যের এজেন্ট ও লোকাল এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সমন্বয়কারক হিসাবে কাজ করবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, বিডব্লিউটিসিসি– এর কার্যক্রম মনিটরিং করতে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি থাকবেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার প্রতিনিধি। সদস্য সচিব থাকবেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তররের প্রধান প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক।
এছাড়া, সদস্য হিসেবে থাকবেন— নৌ-বাণিজ্য দপ্তর (মার্কেন্টাইল মেরিন অফিস) এর প্রিন্সিপাল অফিসার, বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, কোস্টাল শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিনিধি, ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চট্টগ্রাম, খুলনা প্রতিনিধি, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ/মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ/পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এর প্রতিনিধি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ এর প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কাস্টম হাউজের প্রতিনিধি। এই কমিটি লাইটার জাহাজ বরাদ্দ ও পরিচালনা কার্যক্রম তদারকি নিশ্চিত করবে।
প্রসঙ্গত, পণ্য পরিবহনের শৃঙ্খলার জন্য ২০০৩ সালে বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিভিওএ), কোস্টাল শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সিওএবি) এবং ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগং (আইভিওএসি) এর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিওটিসি)।
অনিয়ম ও স্বেচছাচারিতার অভিযোগ এনে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল থেকে বের হয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে আলাদা সেল গঠন করে ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগং।
পরবর্তীতে, চট্টগ্রামে জাহাজ মালিক সমিতি ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাইটার জাহাজ চলাচল সংক্রান্ত বিরোধের সমাধান করে বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল গঠন করা হয়।