ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানোয় অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা ফিরোজ গ্রেপ্তার
কুখ্যাত যুবলীগ নেতা ফিরোজ ওরফে ডাকাত ফিরোজকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৭)। তার বিরুদ্ধে ১৮ জুলাই চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর রামপুরা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
ফিরোজের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) শরীফ-উল-আলম। তিনি জানান, ফিরোজ চট্টগ্রামজুড়ে অসংখ্য অপরাধে জড়িত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অবৈধ অস্ত্র রাখা, নাশকতা, মাদক ব্যবসা এবং ডাকাতিসহ ৫টি মামলা রয়েছে।
চান্দগাঁও থানার মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদের ছেলে ফিরোজ ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সহিংসতায় অংশ নেওয়ার পর পরিচিত হয়ে ওঠেন। ওইদিন ফিরোজ ও আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ক্যাডার আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালান।
এতে ১৬ বছর বয়সি মুদি দোকানের কর্মী সাইমন গুলিতে নিহত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ফিরোজ একটি শটগানে গুলি ভরে সেটি তাক করছেন।
পরে নিহত সাইমনের বন্ধু মোহাম্মদ শরীফ বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় ফিরোজসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। র্যাব-৭ জানিয়েছে, ফিরোজকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য তাকে চান্দগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
ফিরোজের যত অপরাধ
ফিরোজ একসময় চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ডে 'শিবির ক্যাডার' হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরে তিনি যুবলীগ নেতা হিসেবে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করেন। প্রায়ই দলীয় মিছিল ও সমাবেশে সামনের সারিতে দেখা যেত তাকে।
রাজনৈতিক কার্যক্রমের আড়ালে ফিরোজ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে চাঁদাবাজি এবং মুরাদপুর–বহদ্দারহাট এলাকার অবৈধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন।
ফিরোজের অপরাধী জীবন এক দশকেরও বেশি লম্বা। ২০১১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রবর্তক মোড়ে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ফিরোজসহ অন্যান্য অস্ত্রধারীরা ১১ লাখ টাকা লুট করেন। পরদিন তাকে তার সহযোগী মনিরুজ্জামানসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই সময় পাঁচলাইশে তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে ছিল দুটি বিদেশি পিস্তল, কার্তুজ, একটি একনলা বন্দুক এবং অন্যান্য অস্ত্র।
পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে ফিরোজ দাবি করেছিলেন, এসব অস্ত্র চট্টগ্রামের আন্ডারগ্রাউন্ডের কুখ্যাত অপরাধী ম্যাক্সন ও সারওয়ারের।
২০১৩ সালের ১৯ জুলাই ফিরোজকে আবারও একটি ৯ মিলিমিটার পিস্তল ও তাজা গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। ফিরোজ চট্টগ্রামের স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিনের আলোচিত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন।
একাধিকবার গ্রেপ্তার হওয়া সত্ত্বেও ফিরোজ দীর্ঘমেয়াদি কারাভোগ এড়িয়ে তার অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছেন।