ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদধারী হলেই গণহারে গ্রেপ্তারের পক্ষে নন সারজিস আলম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ছাত্রলীগের পদধারী সদস্যদের গণহারে গ্রেপ্তার সমর্থনযোগ্য নয়।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাত ৮টায় তার ভেরিফাইড প্রোফাইলে তিনি লেখেন, '[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের] ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণহারে গ্রেপ্তার কখনোই সমর্থন করি না। এটা হতে পারে না।'
সারজিস বলেন, যারা ১ জুলাই থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রাজপথে জীবনবাজি রেখে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তাদের প্রতি এ আচরণ ঠিক নয়। তিনি উল্লেখ করেন, আন্দোলন সফল না হলে এ শিক্ষার্থীদেরই বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতো এবং তাদেরকে 'বিশ্বাসঘাতক' বলা হতো।
পোস্টের শুরুতে তিনি জানান, তার এ বক্তব্য কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের পদধারী সদস্যদেরকে কেন্দ্র করে।
'১ জুলাইয়ের পূর্বে এবং ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্দোলন চলমান ছিল, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। এ আন্দোলনটা মেইনলি ১৫ তারিখ পর্যন্ত হলের ছেলেমেয়েরাই [এগিয়ে] নিয়ে গিয়েছে।'
যে সিস্টেমের কারণে এসব শিক্ষার্থী 'বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রলীগে যুক্ত' হয়েছে, সে সিস্টেমের জন্য সবাই দায়ী বলে উল্লেখ করেন সারজিস। 'কারণ, আপনারা হলে ও ক্যাম্পাসে… ওদের সাথে হওয়া অন্যায়ে কেউ বাধা দেননি। ওরা যদি সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির জন্য পোস্ট নেয়, তবে আপনিও গা বাঁচাতে চুপ ছিলেন।'
'বরং যখনই সুযোগ হয়েছে, ওরা সাহস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। আর তখনও আপনি নীরব দর্শক হয়ে অনেক কিছু শুধু দেখে গেছেন,' লেখেন সারজিস।
সারজিস আরও বলেন, এই ৮০ শতাংশ ছাত্র যদি কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তি হোক।
'কিন্তু যখন দরকার ছিল তখন রাজপথে নামালাম আর এখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণহারে গ্রেপ্তার হবে; এটা কখনোই সমর্থন করি না। এটা হতে পারে না,' লেখেন সারজিস।
তিনি উল্লেখ করেন, 'যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে আমার সাথে রাজপথে নেমেছে, তারা আমার ভাই। '২৪-এর অভ্যুত্থানের যোদ্ধা। আমি তাদের পক্ষে থাকব।'
সারজিস আলম বলেন, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা খুব ভালো করে জানেন এখানে হলে থাকতে হলে অবশ্যই ছাত্রলীগ করতে হতো।
ছাত্রলীগ কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হলের কমিটিতে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী কিছু বিশেষ কারণে যুক্ত থাকতেন—যেমন ভালো রুম বা সিট পাওয়া, চাকরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকা এবং অন্যের অত্যাচার থেকে বাঁচা।
'বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করত, অনেকে ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর অত্যাচার চালাত…' তিনি বলেন।
তিনি বলেন, প্রথম ধাপের ১৬-১৭ দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এ ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী। তারা হল থেকে ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে নামার কারণেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা সাহস পায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
'হলের পার্সপেক্টিভে সত্য এটাই যে, এ পোস্টেড তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের হলের ছেলেরা আন্দোলনে এসেছিল বলেই ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই সম্ভব হয়েছিল এবং আন্দোলনটাকে প্রাথমিকভাবে অন্য কোনো দলের বা সরকারবিরোধী ট্যাগ দেওয়া যায়নি,' বলেন তিনি।
সারজিস আলম বলেন, ১৫ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন না হলে ৫ আগস্টে কখনোই সম্ভব হতো কি না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, "এখন প্রশ্ন হলো, এ পোস্টেড শিক্ষার্থীদের আমি ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে নিষিদ্ধের কাতারে ফেলব কি না? তার উত্তর, 'ফেলব না।'"