বাস–ট্রাকের টায়ার উৎপাদনে ১,৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ মেঘনা গ্রুপের
১,৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বাস ও ট্রাকের জন্য টায়ার উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে মেঘনা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান– মেঘনা ইনোভা রাবার কোম্পানি লিমিটেড।
দেশের বৃহত্তম বাইসাইকেল রপ্তানিকারক মেঘনার এই উদ্যোগের ফলে বাস–ট্রাকের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা টায়ারের উপর নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে আসবে। এর ফলে সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা।
মেঘনা গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার লুৎফুল বারী টিবিএসকে বলেন, "দুই ধরনের টায়ার আছে; একটি রেডিয়াল টায়ার এবং অন্যটি বায়াস টায়ার। আমরা গত অক্টোবর মাস থেকে ট্রাক–বাসের জন্য ১৫–২০ ইঞ্চি মাপের বায়াস টায়ার উৎপাদন শুরু করেছি। আমাদের লক্ষ্য আছে আগামী ৬ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে এই টায়ারের চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ করা।"
তিনি বলেন, "ইতোমধ্যে ১,৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে— যার ৮০ শতাংশই হয়েছে মেশিনারি খাতে। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৩০০ লোকের। আগামী এক বছরে বায়াস টায়ারে মোট বিনিয়োগ হবে ২,১০০ কোটি টাকা। তখন আরও ১০০ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।"
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রায় ৬৫ বিঘা জমিতে কোম্পানির উৎপাদন কারখানা। নতুন করে সেখানে আরও ৫ বিঘা জমিতে সম্প্রসারণ হয়েছে বাস ও ট্রাকার টায়ার তৈরির কারখানা।
২০২৬ সাল নাগাদ এখানে রেডিয়াল টায়ার কারখানা স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
লুৎফুল বারী জানালেন, "২০২৬ সালে ট্রাক–বাসের জন্য রেডিয়াল টায়ার উৎপাদনে আমরা আরও ১,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবো।"
বাস-ট্রাকের মতো বড় আকারের যানবাহনের জন্য স্থানীয়ভাবে টায়ার উৎপাদন করতে পারলে তা আমদানির পরিবর্তে সাশ্রয়ী বিকল্প হয়ে উঠতে পরে বলে মনে করা হচ্ছে।
মেঘনা ইনোভা রাবার কোম্পানি লিমিটেড সাইকেল, মোটরবাইক ও থ্রি-হুইলার ও রিক্সার টায়ার আগে থেকেই তৈরি করে। এগুলো তাদের এমটিএফ ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি হয়। তবে বর্তমানে প্রায় সব ধরনের বাস ও ট্রাকের টায়ারই আমদানি করা হয় বলে জানান লুৎফুল বারী।
এই খাতের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে মেঘনা গ্রুপ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, এপেক্স হোসেন টায়ার, রূপসা টায়ার্স অ্যান্ড কেমিক্যালস লিমিটেড ও আলম টায়ার।
এই খাতের আরেক প্রতিযোগী কোম্পানি ছিল গাজী গ্রুপ। তবে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ধারাবাহিক অগ্নিসংযোগের পর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন কারখানা।
শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে মোটরগাড়ির টায়ারের বাজার প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকার।
কৃষি টায়ার তৈরিতে চ্যালেঞ্জ
কৃষি টায়ার উৎপাদনের জন্যও ফ্যাক্টরি তৈরি করেছে মেঘনা গ্রুপ। সেখানে ২৮ ইঞ্চি আকারের বড় টায়ার উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে বাজারজাত করতে এখানে ভ্যাট দিতে হচ্ছে তাদের। অথচ, এই টায়ার আমাদানিতে কোনো ভ্যাট নেই।
আমদানিতে সুবিধা দেওয়ায় কৃষি টায়ার উৎপাদন এখন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন লুৎফুল বারী। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, "বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রে ব্যবহৃত টায়ার আমদানিতে কোনো ভ্যাট নেই। অথচ আমাদের উৎপাদিত ফিনিস পণ্যটিতে ভ্যাট দিতে হয়। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, টায়ার আমাদানিতে ভ্যাট বসাক— আর সেটা না করলে বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষি টায়ার উৎপাদনও ভ্যাট ফ্রি করে দেওয়া হোক।"
তিনি বলেন, "২৮ ইঞ্চি বড় আকারের এ টায়ার বাংলাদেশে পুরোটাই আমদানি করা হয়। আমরা প্রথম এই টায়ার উৎপাদন করছি। কৃষি টায়ার ট্রাক্টরে ব্যবহার হয়। আমরা চাই, এখানে যেন দেশি শিল্প সুরক্ষা দেওয়া হয়।"
কৃষি যন্ত্রপাতি জন্য ( ট্রাক্টর) বিশেষভাবে নকশা করা হয় কৃষি টায়ার। এ টায়ার ও টিউব আমাদানিতে ভ্যাট প্রাত্যাহার আছে। কৃষি যন্ত্রে ব্যবহার হওয়া টায়ার এইচএস কোড– ৪০১১.৭০.১০ এবং কৃষিযন্ত্রে ব্যবহার হওয়া টিউব এইচএস কোড– ৪০১৩.৯০.১০ তে ভ্যাট প্রত্যাহার আছে। দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে এখানে টায়ার ও টিউবের উপর ১৫ শতাংশ আমাদানি শুল্ক ও ৫ শতাংশ রেগুলেটরি মূল্য সংযোজন করা, এটিআই ও এটি আরোপের সুপারিশ রাখেন তারা।
টায়ার উৎপাদন কার্যক্রমের সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখে কোম্পানিটি স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য একটি 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' নিশ্চিত করতে নীতি সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে।
রেডিয়াল টায়ার উৎপাদনে পরিকল্পিত বিনিয়োগ এবং স্থানীয় শিল্পের উন্নতির জন্য সরকারের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছে কোম্পানিটি। এর মাধ্যমে গ্রুপটি বাংলাদেশের টায়ার বাজারে নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে চাইছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।