অনাগত সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারলেন না অ্যাডভোকেট আলিফ
চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের (৩৫) তাসকিয়া নামের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। দ্বিতীয় সন্তানের অপেক্ষায় ছিলেন আলিফ এবং তারিন দম্পতি।
কিন্তু চট্টগ্রামে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধাদানকারী ইসকন সর্মথকদের হামলায় আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) নিহত হন অ্যাডভোকেট আলিফ। ফলে অনাগত সন্তানের মুখ আর দেখে যেতে পারলেন না তিনি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গের পাশে নিহত আলিফের স্বজনরা কেবল বিলাপ করছেন। সন্তানকে হারিয়ে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন তার বৃদ্ধ বাবা জামাল উদ্দিন।
বিলাপ করতে করতে জামাল উদ্দিন বলেন, 'আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। যারা আমার ছেলেকে এমনভাবে মেরেছে – আমি আল্লাহর কাছে তাদের বিচার দিলাম। আল্লাহ যেন তাদের বিচার করেন।'
জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্টদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধাদানকারী ইসকন সর্মথকদের হামলায় নিহত হন সাইফুল ইসলাম আলিফ। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কোতোয়ালীর রঙ্গম সিনেমা হলের পাশের মেথর পট্টি থেকে আহত অবস্থায় ওই আইনজীবীকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. হাসান নামে এক আইনজীবী বলেন, পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী আলিফকে বিক্ষোভকারীরা কোপায়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
নিহত আলিফের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায়। সম্প্রতি আলিফ চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত হয়েছিলেন। সাত ভাইবোনের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ চতুর্থ।
আলিফের বড় বোন জান্নাত আরা বেগম টিবিএসকে বলেন, আমার ছোট ভাই আলিফের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। সে অকালে তার বাবাকে হারিয়েছে। অনাগত সন্তানও তার বাবার মুখ দেখবে না। আবার ভাইয়েরও তার দ্বিতীয় সন্তানকে দেখার সৌভাগ্য হলো না। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে। আমার এমন নিরপরাধ ভাইকে কেন মেরে ফেলা হলো। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিহত আলিফের পরিবারের সদস্য, স্বজন এবং চট্টগ্রাম আদালতের সহকর্মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় তারা বলেন, অ্যাডভোকেট আলিফ পেশাগত জীবনে খুবই সৎ ছিলেন। তার এমন মৃত্যু আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না।
আলিফের ভাগিনা তাসলিমুল হাসান টিবিএসকে বলেন, আমার মামা খুবই ভালো ছিলেন। যখন আমার সাথে দেখা হতো পাড়াশোনা থেকে শুরু করে সব খোঁজ-খবর নিত। আমার মামাকে যারা হত্যা করেছে– আমরা তাদের ফাঁসি চাই।