কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে এ বছর নতুন রেকর্ড করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে। বৈশ্বিক সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও এ অর্জন বন্দর ব্যবস্থাপনা, অংশীদারদের সহযোগিতা এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির ফল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বছরের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩২ লাখ টিইইউ (টুয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সম্পন্ন হয়েছে বন্দরে— যা বছরের শেষে প্রায় ৩২ লাখ ৮০ হাজার টিইইউতে পৌঁছাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। এ সাফল্যের ফলে বৈশ্বিক তালিকায় বন্দরের অবস্থান আরও উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর প্রথম ২০১৯ সালে ৩০ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি কন্টেইানার হ্যান্ডলিং করে থ্রি মিলিয়ন ক্লাবে প্রবেশ করে। এরপর ২০২১ সালে ৩২ লাখ ১৪ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। আর এবার, ২০২৪ সালে বন্দরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কন্টেইানর হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩০,৫০,৭৯৩ টিইইউ। চলতি বছরের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩২,০২,৬৮৮ টিইইউ। সেই হিসেবে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত গত বছরের চেয়ে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৪.৭৪ শতাংশ।
বন্দরে প্রতিদিন ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টিইইউ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়। বছরের শেষ ৯ দিন গড়ে ৭ হাজার টিইইউ হিসেবে আরও ৬৩ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হবে বলে আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই হিসেবে বছর শেষে ৩২ লাখ ৮০ হাজারের কাছাকাছি সংখ্যক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হবে। এবার কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হতে পরে ৭.৫১ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, "বৈশ্বিক নানান সংকট কাটিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এর ফলে বেড়েছে আমাদানি-রপ্তানি। একই সাথে বেড়েছে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং। এছাড়া বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল করতে নেওয়া হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। সব মিলিয়ে এর সুফল পাওয়া গোছে পোর্ট পারফরমেন্সে।"
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিকতার ফসল এই রেকর্ড এবং প্রবৃদ্ধি। প্রতিবছরের তুলনায় এবারের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানির হার ২.১। অর্থাৎ দুটি পণ্যবাহী আমদানি কন্টেইনারের বিপরীতে এক কন্টেইনার পণ্য রপ্তানি হয়। আমাদানি কন্টিইনার থেকে পণ্য খালি করে একই কন্টেইনারে করে রপ্তানি হয় পণ্য। খালি কন্টেইনারগুলো রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনারের সাথে বিভিন্ন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে প্রেরণ করা হয়।
বিকডার সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল আমিন শিকদার টিবিএসকে বলেন, "বছরে ৩০ লাখ কন্টেইনার হ্যন্ডলিং হলে এরমধ্যে আমাদনি কন্টেইনারের সংখ্যা হয় প্রায় ১৪ লাখ টিইইউ। এরমধ্যে বছরে খালি কন্টইনার থাকে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টিইইউ। রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় প্রায় ৭ লাখ টিইইউ। বাকি ৯ লাখ খালি কন্টেইনার ফেরত পাঠানো হয়।"
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা ৫৩,৫১৮ টিইইউ। ২৪ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দরে কন্টেইনারের সংখ্যা রয়েছে ৩৫,৯২৭ টিইইউ। এরমধ্যে নিলামযোগ্য কন্টেইনার ১০,০১৬ টিইইউ। গত ৩১ অক্টোবর বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিল ৪০,৪৪৩ টিইইউ।
বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দর
লন্ডনভিত্তিক শিপিং প্রকাশনা লয়েডস লিস্ট নিয়মিতভাবে বৈশ্বিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর র্যাঙ্কিং তালিকা প্রকাশ করে। ২০২৩ সালের তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবস্থান ৬৭তম।
২০২৪ সালে রেকর্ড কন্টেইানার হ্যান্ডলিং হওয়ায় বৈশ্বিক ক্রম তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান আরও উন্নতি হবে বলে মনে করছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বছরজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোাগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে অস্থিরতা, জুলাই-আগস্টে কারফিউ, ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতা ও বন্যার কারণে সৃষ্ট জট অনেকটা সময় বন্দরের কার্যক্রমকে স্থবির করে দিয়েছিল।
এতসব দুর্যোাগের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের এমন সাফল্যকে দেশের ব্যবসায়ীরা ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, "কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং বৃদ্ধির ফলে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের যে উন্নতি হচ্ছে, তা প্রতীয়মান হয়। এর ফলে বৈশ্বিক বন্দর তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান আরও উন্নতি হবে।"