২০৩৯ সাল নাগাদ বাংলাদেশের জিডিপি সুইজারল্যান্ড, সুইডেনকে ছাড়িয়ে যাবে; তবে মাথাপিছু জিডিপিতে ব্যবধান বাড়বে
পোশাক শিল্পের বাইরেও ওষুধ ও ইলেকট্রনিক্স খাতে সফল বহুমুখীকরণের সুবাদে ২০৩৯ সালের মধ্যে বিশ্বের ২১তম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অবকাঠামোতে ব্যাপক বিনিয়োগ এবং ক্রমবর্ধমান জনমিতিক লভ্যাংশের (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) সুবিধার কারণে দেশের অর্থনীতির এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর)।
সিইবিআরের ১৬তম বার্ষিক ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি আকারের দিক থেকে সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইডেন ও বেলজিয়ামের মতো উচ্চ আয়ের দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল ২০২৫ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান মার্কিন ডলারে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ভিত্তিতে এই র্যাংকিং তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ২০৩৯ সালের মধ্যে ১.৬০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হয়ে উঠবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
বর্তমানে ৪৩৪ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি নিয়ে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৩৭তম বৃহৎ অর্থনীতি। ২০৩৯ সাল নাগাদ জিডিপির দিক থেকে বাংলাদেশ ১৬ ধাপ এগিয়ে ২১তম অবস্থানে পৌঁছাবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
তবে এই অর্থনৈতিক উত্থানের বিপরীতে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি এখনও বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ২০৩৯ সালের মধ্যে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে মাত্র ৮ হাজার ৬১ ডলার। এর ফলে মাথাপিছু জিডিপিতে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ১২৩তম।
এর ফলে মাথাপিছু জিডিপির বৈশ্বিক তালিকায় শেষদিক থেকে ৬৬তম অবস্থানে জায়গা হবে বাংলাদেশের, সুইজারল্যান্ডের মতো উচ্চ আয়ের দেশগুলো এরচেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবে। ২০৩৯ সালে সুইজারল্যান্ডের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৩ ডলার, মাথাপিছু জিডিপিতে বৈশ্বিকভাবে দেশটির অবস্থান হবে তৃতীয়। সুইজারল্যান্ডের মাথাপিছু জিডিপি হবে বাংলাদেশের তুলনায় ১৮ গুণ বেশি।
একইভাবে বাংলাদেশ জিডিপির আকারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেলেও মাথাপিছু জিডিপিতে বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকবে। ২০৩৯ সালে মাথাপিছু জিডিপিতে আরব আমিরাত ১২তম অবস্থানে থাকবে। ওই বছর দেশটির মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ লাখ ৫ হাজার ২০৯ ডলার—বাংলাদেশের চেয়ে ১২ গুণ বেশি। ২০৩৯ সালে মাথাপিছু জিডিপিতে সুইডেন ও বেলজিয়াম যথাক্রমে ১৮তম ও ২২তম অবস্থানে থাকবে।
মাথাপিছু জিডিপিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আগামী ১৫ বছরে মালদ্বীপ নেতৃত্ব দেবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মাথাপিছু জিডিপিতে দেশটি ২০৩৯ সালে ৫৯তম অবস্থানে (৩৮ হাজার ৮৫৯ ডলার) থাকবে। এরপরই থাকবে ভুটান (১০৬তম) ও বাংলাদেশ (১২৩তম)।
ভালো খবর
বাংলাদেশ ২০৩৯ সালের মধ্যে প্রতি মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতের (১২৪তম) চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ভারত তখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে।
অন্যদিকে মাথাপিছু জিডিপিতে দক্ষিণ এশিয়ায় তলানিতে থাকবে পাকিস্তান (১৬২তম)। পাকিতানের ওপরেই থাকবে নেপাল (১৬০তম) ও শ্রীলঙ্কা (১৩৪তম)।
২০২৪ সালে ২ হাজার ৫২১ ডলার মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে এই র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ এখন ১৪৩তম অবস্থানে আছে।
বাংলাদেশ ২০৩৯ সালের মধ্যে ২১তম বৃহৎ অর্থনীতি হয়ে উঠলেও মাথাপিছু জিডিপি বলছে, সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ব্যক্তিগত উন্নতির মধ্যে ভারসাম্য নেই।
বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষে যারা
সিইবিআরের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে বিশ্ব জিডিপির মোট আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ১১০ ট্রিলিয়ন ডলার, যা ২০৩৯ সাল নাগাদ দ্বিগুণ হয়ে ২২১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
আশা করা হচ্ছে, প্রতিযোগিতায় চীনকে টেক্কা দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র নিজের অবস্থান ধরে রাখবে।
ভারত দৃঢ়ভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রক্ষেপণ অনুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যে জাপানকে টপকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে ভারত। ২০২৮ সালের মধ্যে ভারত ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হওয়ার মাইলফলক পেরিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে; ২০২৯ সালে জার্মানিকে ছাড়িয়ে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে।
সিইবিআর পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী ১৫ বছরও টুভালু (১৮৯তম), নাউরু (১৮৮তম), মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ (১৮৭তম), কিরিবাতি (১৮৬তম) ও পালাউ (১৮৫তম) বিশ্বের ক্ষুদ্রতম অর্থনীতি থাকবে। এখনও এই দেশগুলোই সবচেয়ে ছোট অর্থনীতির দেশ।