জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় নৌ শ্রমিকদের কর্মবিরতি: সারাদেশে আটকে আছে ১৫ লাখ টন পণ্য
নৌযানে সাত খুনের ঘটনার বিচারের দাবিসহ চার দফা দাবিতে লাইটার জাহাজের শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতিতে নৌপথের পণ্য পরিবহণ খাতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতির ফলে সারা দেশে ৪৫টি ঘাট ও চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আটকা পড়েছে প্রায় ১৫ লাখ টন পণ্য।
এসব পণ্যের মধ্যে গম, মসুর ডাল, মটর ডাল, সয়াবিন বীজ, সার, কয়লা ও সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া জ্বালানি তেলসহ দেশের সবগুলো বিমান বন্দরের বিমানের জন্য জেট-ফুয়েল পরিবহনও বন্ধ রয়েছে।
গত ২৩ ডিসেম্বর মেঘনা নদীতে লাইটার জাহাজের সাতজনকে খুনের ঘটনার পরপরই প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল নৌযান ফেডারেশন। এই চার দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সাত খুনের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচার, নৌপথের সার্বিক নিরাপত্তা এবং নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ। তবে এ নিয়ে প্রশাসন কোনো আলাপ-আলোচনা করেনি সংগঠনটির সঙ্গে। ফলে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে কর্মবিরতি দেয় তারা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল ও বাংলাদেশ নৌ যান শ্রমিক ফেডারেশনের তথ্যমতে, কর্মবিরতির কারণে দেশের ৪৫টি ঘাটে ৭৩৮টি জাহাজে আটকা পড়ে প্রায় ১০ লাখ টন পণ্য। আর বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ ও এসব জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে তোলা পণ্যের পরিমাণ পাঁচ লাখ টন। বিদেশ থেকে আসা বড় জাহাজ নির্দিষ্ট সময়ের চুক্তিতে আনায় সময়মতো পণ্য খালাস করতে না পারলে ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে আমদানিকারকদের। এর বাইরে জ্বালানি তেল ও জেট-ফুয়েল পরিবহণ বন্ধ আছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশে ৩৪টি রুটে প্রতিদিন অয়েল ট্যাংকার, লাইটার জাহাজ সহ পণ্য নিয়ে প্রায় ২০০টি জাহাজ চলাচল করে।
নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "জাহাজের সাত খুনের ঘটনার তদন্ত তারাও করছেন। নৌপথে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। নৌযান শ্রমিকদের আহ্বান জানানো হয়েছে, অবশ্যই আজ (শুক্রবার) রাতের মধ্যে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করতে। রোববার উপদেষ্টাসহ বৈঠক করা হবে।"
বাংলাদেশ নৌ যান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবী আলম বলেন, "অতীতে কর্মবিরতি শুরু হওয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার এখনও বৈঠক করেনি। শুক্রবার চাইলেও বৈঠক করা যায়, দেশের প্রয়োজনে। শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত তাঁরা বৈঠক ছাড়া কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন না।"