চট্টগ্রাম বন্দরে নৌযান শ্রমিকের কর্মবিরতি অব্যাহত, বন্ধ পণ্য ও জ্বালানি খালাস
চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুনের রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে নৌযান শ্রমিকের কর্মবিরতি আজ শনিবারেও (২৮ ডিসেম্বর) অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য ও জ্বালানি খালাস এবং তা স্থানীয় নদীপথে সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতির ফলে সারাদেশের ৫৭টি ঘাট ও চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আটকা পড়েছে প্রায় ১৫ লাখ টন পণ্য।
নৌযান শ্রমিকদের দাবি, চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচার করতে হবে, নৌপথের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আলাপ-আলোচনা না হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা।
তারা জানিয়েছেন, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়ে নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর আগামীকাল রোববার (২৯ ডিসেম্বর) শ্রমিকদের সঙ্গে বসার কথা বললেও তাতে রাজি হননি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্দর থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য নিয়ে দেশের সব নৌরুটে এবং চট্টগ্রামের ঘাটগুলোতে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে জ্বালানি তেল পরিবহনও।
লাইটার জাহাজ মালিদের তিনটি সংগঠনের সমম্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল (বিডব্লিউটিসিসি) এর তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫৭টি ঘাটে ৭৩৮টি লাইটার জাহাজে আমদানি পণ্য বোঝাই অবস্থায় রয়েছে। কর্মবিরতির কারণে সেগুলো গন্তব্যে যেতে পারছে না।
এসব পণ্যের মধ্যে গম, মসুর ডাল, মটর ডাল, সয়াবিন বীজ, সার, কয়লা ও সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, জ্বালানি তেলসহ দেশের সবগুলো বিমান বন্দরের বিমানের জন্য জেড-ফুয়েল পরিবহনও বন্ধ রয়েছে।
লাইটার জাহাজ মালিক সংগঠন ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চট্টগ্রাম (আইভোয়াক) এর মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অন্তত ৩০টি লাইটার জাহাজ মাদার ভেসেল থেকে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের পণ্য বোঝাই করে। প্রতিটি জাহাজে গড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন করে ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য বোঝাই হয়। গত শনিবার এবং রোববারে ৩ লাখ ৬০ হাজার টন পণ্য মাদার ভেসেল থেকে আনলোড করা যায়নি।"
তিনি আরও বলেন, "নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে এসব আমদানি পণ্যের সাপ্লাই চেইনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মাদার ভেসেলগুলো অলস বসে থাকায় প্রতিটি মাদার ভেসেলে দৈনিক ২০ হাজার ডলার করে ডেমারেজ গুনতে হবে। যত দ্রুত লাইটার জাহাজ শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার বা স্থগিত করা হবে, ততই তা দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।"
এদিকে, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং এবিসি শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. আরিফ জানান, "বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় জাহাজের যে ডেমারেজ উঠেছে, এই বাড়তি ব্যয় আমদানিকারককে বহন করতে হবে। এক্ষেত্রে আমদানি করা পণ্যের দামে প্রভাব পড়তে পারে। এরমধ্যে খাদ্যপণ্যে প্রভাবটা বেশি পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।"
মোংলা বন্দরে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় ১৪ জাহাজ
এদিকে, মোংলাও দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি চলায় বন্দরে পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে অন্তত ১৪টি দেশ-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ।
গত দুইদিন ধরে পণ্য খালাস করতে না পারায় লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যাবসায়ীদের।
আজ শনিবার পণ্য বোঝাই আরও ২টি বিদেশি জাহাজ মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকায় প্রবেশ করার কথা রয়েছে।
অপরদিকে, দেশে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাইটার, কার্গো ও বিভিন্ন নৌযান বন্দর চ্যানেলের পশুর নদীতে অবস্থান করছে। এখানে গত দুই দিনে প্রায় তিন শতাধিকের মতো লাইটার জাহাজ ছোট ছোট বয়ায় নোঙ্গর করে আছে। এরমধ্য ৭০ ভাগ লাইটার ও কার্গোতে পণ্য বোঝাই রয়েছে, যেগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছানোর কথা থাকলেও কর্মবিরতির কারণে মোংলা বন্দর চ্যানেল ছেড়ে যেতে পারছে না।
মোংলা লাইটার শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মাইনুল জোসেন মিন্টু বলেন, "নৌযান শ্রমিকরা এবারে যে দাবি নিয়ে কর্মবিরতি শুরু করা করেছে, তা পূরণ না হলে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।"